বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জেলেদের চিন্তা না করেই সুন্দরবন ও সাগরে মাছ ধরা বন্ধ

  •    
  • ১৭ জুলাই, ২০২২ ১৯:৪৬

বর্তমানে একই সময়ে সাগর ও সুন্দরবনে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। এতে খুলনা অঞ্চলের জেলেরা পড়েছেন বিপাকে। সরকারি পর্যাপ্ত সহায়তা না পেয়ে বাড়িতেই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ৬৫ দিন যেকোনো প্রজাতির মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

মাছের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বঙ্গোপসাগর ও সব নদী মোহনায় ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে।

এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় লবণাক্ত বনভূমি সুন্দরবনেও ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মোট তিন মাসের জন্য মাছ ধরা ও ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী, এই সময়ে সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ।

একাধারে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনে মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকায় এখন অলস সময় পার করছেন খুলনা অঞ্চলের জেলেরা।

খুলনা জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুসারে, জেলায় মোট জেলে ৪২ হাজার ৯২৭ জন। এর মধ্যে সমুদ্রে মাছ শিকার করেন ৩১ হাজার ৫১০ জন। এ ছাড়া বিভিন্ন নদীর মোহনায় ইলিশ মাছ শিকার করেন ২ হাজার ১০০ জন।

বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবন থেকে সরাসরি সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন দুই-তিন লাখ বনজীবী। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ।

সুন্দরবন থেকে সরাসরি সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন ২ থেকে ৩ লাখ বনজীবী

বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান ও পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা না থাকায় এই সময়ে খেয়ে না খেয়েই দিন পার করছেন ওইসব জেলে।

খুলনায় সবেচেয়ে বেশি সমুদ্রগামী জেলে রয়েছেন পাইকগাছা উপজেলায়। এখানকার অন্তত ২০টি জেলে পরিবারের সঙ্গে কথা হলে তারা প্রত্যেকেই নিষিদ্ধ মৌসুমে বিকল্প কর্মসংস্থান বা পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা দাবি করেন।

পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের মাহমুদকাটি গ্রামের শিলা বিশ্বাস বলেন, ‘মহাজনদের সঙ্গে আমার স্বামী নিয়মিত সাগরে মাছ ধরতে যান। তাতে আমাদের সংসার চলে। এখন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ।

‘মৎস্য অফিস থেকে ২০ কেজি চাল দিছে। পাঁচজনের সংসারে এই চাল ১০-১২ দিনেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সাগরে তো মাছ ধরা বন্ধ ৬৫ দিন। আর শুধু চাল দিয়ে তো সংসার চলে না, কাঁচাবাজার দরকার হয়, তেল-মসলা লাগে।’

ওই গ্রামেরই নেহালা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী অন্য কোনো কাজ করতে পারে না। সাগরে জাল ফেলে মাছ ধরার কাজটি ভালোভাবে পারে। এখন সাগরে যাওয়া বন্ধ, তাই পরিবারের কোনো আয় নেই। বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসে জাল বুনছি। তা বিক্রি করে সামান্য কিছু টাকা লাভ হচ্ছে, তাই দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।’

নিখিল বিশ্বাস নামে এক জেলে বলেন, ‘দুই মাস হয়ে গেছে সাগরে যাওয়া বন্ধ। এই সময়টায় বাড়িতেই বসে আছি। মহাজনের কাছ থেকে ধার করে এখন সংসার চালাচ্ছি। যখন সাগরে যেতে পারব, তখন সেই টাকা পরিশোধ করব।’

নিখিল জানান, মাছ ধরা ছাড়া আর কোনো কাজ করতে না পারায় নিষিদ্ধ মৌসুমে বাড়িতে বসে থাকা ছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই।

একই গ্রামের জেলে অনিমেষ মণ্ডল বলেন, ‘আমি নিয়মিত সুন্দরবনে যাই। কোনো মৌসুমে কাঁকড়া, কখনও মাছ, কখনও মধু আহরণ করি। আমার নৌকা ও জাল আছে। সাত দিন বনে থাকতে পারলে সব খরচ বাদ দিয়ে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা লাভ হয়।’

‘তবে এখন বনে যাওয়ার পাস (অনুমতি) পাচ্ছি না। বারবার বন অফিসে গিয়ে বসে থেকে চলে আসছি। বনের অফিসাররা বলছেন, তিন মাস কাউকে বনে যেতে দেবে না। তাই বাড়িতে বসে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলের খরচও দিতে পারছি না। সরকার থেকে কিছু চাল দিছে, তা দিয়ে আর কয়দিন চলে?’

সংসার চালাতে বিক্রির জন্য জাল বুনছেন জেলে পরিবারের এক সদস্য

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ‘সাগরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণ বন্ধ করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো- মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। যাতে এই সময়টায় উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ নির্বিঘ্নে প্রজনন ঘটাতে পারে।

‘এই সময়টিতে যেন জেলেদের কষ্ট না হয়, সে জন্য আমরা মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জেলেদের সহায়তা দিয়ে থাকি। আমরা ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ রেখেছি। অন্যদিকে বন বিভাগ ৯০ দিনের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।’

জয়দেব পাল মনে করেন, বন ও মৎস্য অধিদপ্তর যদি সম্মিলিতভাবে এই নিষেধাজ্ঞা ও সহায়তা দেয়, তাহলে জেলেরা আরও সুফল পেত।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, ‘সুন্দরবনে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই সময়টিতে মূলত বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও মাছের প্রজনন ঘটে। এ ছাড়া বন্যপ্রাণীরা এই সময়ে যেন অবাধ চলাচল করতে পারে সে জন্যও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।’

মিহির কুমার দে আশা প্রকাশ করেন, বনের সঙ্গে যাদের জীবিকা জড়িত, তাদের এবার আশানুরূপ সহায়তা করা না গেলেও আগামীতে সেটা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর