প্রায় দেড় হাজার বাসের কাগজ চুরি করে চাঁদা আদায়কারী চক্রের হোতাসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে হোতা রাকিব ওরফে তুফানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তার সঙ্গে ছিলেন শুকুর আলী, হৃদয় হোসেন ও মো. শামিম নামে তিন সহযোগী।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছে থেকে বাসের চোরাই রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেন উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন মালিবাগ সিআইডি’র মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মেট্রো’র অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।
রোববার দুপুরে তিনি এ সব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘একটি সংঘবদ্ধ চক্র ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরের মিরপুর লিংক, শিকড় পরিবহন, খাজাবাবা পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহন এবং রবরব পরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনের বাসে যাত্রী সেজে ওঠে এবং বাসের ব্লু-বুক ও রেজিস্ট্রেশন সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করে।’
এরপর তারা গাড়ীর মালিক, ম্যানেজার ও চালকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে চোরাই প্রতিটি গাড়ির কাগজের জন্য ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। তারা প্রথমদিকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চক্রটি গাড়ীতে অগ্নিসংযোগ ও চালকদেরকে প্রাণ-নাশের হুমকি দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘কাগজপত্র ছাড়া রাস্তায় বাস চালাতে না পারায় মালিকরা চাঁদার পরিমাণ কমিয়ে প্রতি গাড়ির কাগজের জন্য ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে দিতো। টাকা পাওয়ার পর তারা কিছু গাড়ির কাগজপত্র ফেরত দেয়। আটকে রাখা বাকি কাগজপত্র ফেরত দেয়ার শর্তে মিরপুর লিংক, খাজাবাবা ও বিকল্প পরিবহন বাসের মালিকদেরকে মাসিক চাঁদা দিতে বাধ্য করে। ট্রাফিকের মামলার ভয়ে তারা বাধ্য হন চাঁদা দিতে।
ইমাম হোসেন বলেন, ‘অনেক পরিবহন মালিক মাসিক চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় চক্রের হোতা তুফান নাম পরিচয় দিয়ে মালিকদেরকে হুমকি দেয়। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ীর মালিকেরা ঢাকার বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গত দুই আড়াই বছরে দেড় শতাধিক জিডি হয়েছে থানায়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা নিজেদের পরিচয় গোপন করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে মোবাইল চুরি করে এবং ঐ মোবাইল দিয়ে ফোন করে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। বাসের মালিকেরা চক্রটির কার্যক্রমে তাদের কাছে জিম্মি।
ডিআইজি আরও বলেন, ‘২০২০ সালে রাকিব বাসের কাগজ প্রথম চুরি করা শুরু করে। প্রায় দেড় হাজার বাসের কাগজ চুরি করে চাঁদা আদায় করেছে তারা। গত ২৮ দিনে ৫৬ টি সিম বদলেছে তুফান। চক্রে আরও অন্তত ৫ জন সদস্য রয়েছে যাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে সিআইডি।’
এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপি’র শাহ আলী থানায় মামলা হয়েছে।