সার্বিয়া থেকে যাত্রা করে বাংলাদেশে আসার পথে গ্রিসে বিধ্বস্ত কার্গো বিমানটি কোনো অস্ত্র বহন করছিল না, বরং এতে প্রশিক্ষণ মর্টার শেল ছিল বলে জানিয়েছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর।)
রোববার বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে আইএসপিআর।
এতে বলা হয়, ‘ডিজিডিপি (ডিরেক্টোরেট জেনারেল অফ ডিফেন্স পারচেজ) ক্রয় চুক্তির আওতায়, কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর জন্য কেনা প্রশিক্ষণ মর্টার শেল বহনকারী একটি বিমান গ্রিসে বিধ্বস্ত হয়েছে।’
আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, ওই চালানে কোনো অস্ত্র ছিল না। চালানটি বীমার আওতাভুক্ত।
বিমানটি যে বাংলাদেশেই আসছিল সেটা নিউজবাংলাকে আগেই জানান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ওই ফ্লাইটটির ঢাকায় অবতরণের অনুমোদন ছিল। এটি সোমবার দুপুর ১২টায় শাহজালালে অবতরণের কথা ছিল।’
দুর্ঘটনার পরপরই বিধ্বস্ত কার্গো বিমানটিতে গোলাবারুদের চালান ছিল বলে জানান সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোজসা স্টেফানোভিচ।
সার্বিয়ান মন্ত্রীর বরাত দিয়ে রোববার আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যম জানায়, রাশিয়ার তৈরি আন্তনভ এএন-১২ মডেলের বিমানটিতে সার্বিয়ার তৈরি ইলিউমিনিটিং মর্টার মাইন (আলোকচ্ছটাযুক্ত মর্টার শেল)সহ প্রায় ১১ টন অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিল। ইউক্রেনের কোম্পানি মেরিডিয়ান লিমিটেডের কাছ থেকে ভাড়া করা বিমানটির গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিমানের আট আরোহীর সবাই মারা গেছেন।
জর্ডান, সৌদি আরব ও ভারত হয়ে এই বিমানের ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল বলেও জানান নেবোজসা স্টেফানোভিচ। তিনি বলেন, ‘বিমানের ক্রুদের প্রত্যেকেই ইউক্রেনের। এর চেয়ে আর বেশি তথ্য নেই আমার কাছে।’
স্থানীয় সময় শনিবার রাতে গ্রিসের উত্তরাঞ্চলীয় কাভালা শহরে কার্গো বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
গ্রিসের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইআরটি তাৎক্ষণিকভাবে জানায়, বিমানটিতে সব মিলিয়ে ১২ টনের মতো মালামাল ছিল। দুর্ঘটনাটি খুবই বিপজ্জনক।
এএফপি জানায়, ইউক্রেনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের ওই বিমানটির ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় পাইলট কাভালা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করাতে চেয়েছিলেন।
নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। একপর্যায়ে বিস্ফোরণও ঘটে।অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহনকারী বিমানটি যে এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে, তার দুই কিলোমিটারের মধ্যে বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ। সবাইকে ঘর থেকে বাইরে বের না হতে বলা হয়েছে।
রোববার সকালে ধ্বংসস্তূপের স্থানটি পরীক্ষা করতে পাঠানো হয় ড্রোন।
গ্রিসের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, স্থানটি নিরাপদ মনে না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকা পরিদর্শনে যাবেন না দেশটির সেনাবাহিনী, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দল এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের সদস্যরা।
গ্রিসের থেসালোনিকিতে ইউক্রেনের দূত ভাদিম সাবলুক দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নিহতদের পরিচয় কর্তৃপক্ষকে দিয়ে তিনি জানান, বিমানটি বাংলাদেশে যাচ্ছিল।
সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত কিছু সংবাদমাধ্যম অনুমান করেছে, বিমানটি ইউক্রেনের উদ্দেশে অস্ত্র বহন করছিল। কিন্তু এ তথ্য সম্পূর্ণ অসত্য।’