ঢাকা ওয়াসার পানির দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে এবার প্রথমবারের মতো গ্রাহকের আর্থিক শ্রেণি বিবেচনায় নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নিম্ন আয়ের মানুষের তুলনায় উচ্চ আয়ের মানুষদের কাছ থেকে তিন গুণ বেশি দাম আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
রাজধানীকে ১০টি জোনে ভাগ করে এলাকাভিত্তিক ও গ্রাহকভিত্তিকভাবে পানির নতুন দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। প্রস্তাবিত দামের বিষয়ে গ্রাহক পর্যায়ে আরও আলোচনা করা হবে।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ বিষয়ক টেকনিক্যাল স্টাডির (কারিগরি গবেষণা) ফলাফল শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
এ সময় বলা হয়, ঢাকায় কত ধরনের গ্রাহক রয়েছে, বিশ্বে কোন কোন পদ্ধতি চালু আছে তা নিরীক্ষা করে পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট আইনও আমলে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নতুন এই দাম নির্ধারণ করলে ওয়াসাকে সরকারকে আর কোনো ভর্তুকি দিতে হবে না। পরিচালন ব্যয় উঠে আসবে পানি বিক্রি করে।
বর্তমানে এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে ওয়াসার ব্যয় হয় ২৫ থেকে ২৬ টাকা। গ্রাহক শ্রেণি আলাদা করে এই দাম উঠিয়ে নেয়া যাবে।
দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে গ্রাহকের আর্থিক শ্রেণি বিবেচনায় নেয়ার চিন্তা কীভাবে এলো-সেটি ব্যাখ্যা করেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। তিনি বলন, ‘আমরা এই আলোচনা বেশ আগে থেকে শুরু করেছিলাম। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন যায়গায় মাননীয় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, গুলশানের লোক যে পয়সা দিয়ে থাকেন, আর যাত্রাবাড়ীর মানুষ একই পয়সা দেবে-এটা হতে পারে না। কাজেই এর জন্য আমরা উদ্যোগ নেই।’
কোন শ্রেণির গ্রাহকের দাম কতনতুন যে দর প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য পানির দাম ১৭ শতাংশের মতো কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে ধনীদের ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ১৪৯ শতাংশ। উচ্চ মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে দাম বাড়বে ১০৫ শতাংশ, মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে ৬৮ শতাংশ এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের ক্ষেত্রে কমবে ১৮ শতাংশের মতো।
ঢাকা ওয়াসার হিসেবে নগরীর প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রাহকই নিম্ন আয়ের। উচ্চ আয়ের মানুষের সংখ্যা এক শতাংশেরও কম। মধ্য আয়ের মানুষ আছে ৪ শতাংশের মতো।
ঢাকা ওয়াসা এখন প্রতি হাজার লিটার পানি ১৫ টাকা ১৮ পয়সায় বিক্রি করে। সব শ্রেণির গ্রাহকদের কাছ থেকে একই হারে টাকা আদায় করা হয়।
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চবিত্তের আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি এক হাজার লিটার পানির জন্য দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি হাজার লিটারে উচ্চবিত্তদের জন্য দাম বাড়ছে ২২ টাকা ৩২ টাকা বা ১৪৯ শতাংশ।
ওয়াসার তথ্যমতে নগরে ওয়াসার উচ্চবিত্ত গ্রাহক মোট গ্রাহকের এক শতাংশেরও কম, ০.৮০ শতাংশ।
উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের পানির দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে ৩১ টাকা ২৫ পয়সা। অর্থাৎ দাম বাড়বে ১৬ টাকা ৭ পয়সা বা ১০৫ শতাংশ।
উৎপাদন মূল্যে পানি পাবে মধ্যবিত্ত মানুষ। তাদের জন্য দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা। যা আগের দামের চাইতে ৯ টাকা ৮২ পয়সা বেশি। অর্থাৎ আগের চেয়ে বেশি ৬৯ শতাংশ বেশি দিতে হবে।
ওয়াসার হিসাবে নগরে ওয়াসার মধ্যবিত্ত গ্রাহক ৪ শতাংশ।
উৎপাদন মূল্যের সমান, অর্থাৎ ২৫ টাকা হারে বিল পরিশোধ করবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও।
নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য দাম বাড়ছে ৩ টাকা ৫৭ পয়সা। প্রস্তাবিত দাম ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ বাড়বে ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।
আর রাজধানীতে ওয়াসার নিম্নমধ্যবিত্ত গ্রাহকই সর্বোচ্চ, যা শতকরা ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ।
নিম্ন আয়ের মানুষ একই পরিমাণ পানির জন্য বিল দেবেন ১২ টাকা ৫০ পয়সা। ফলে তাদের প্রতি হাজার লিটারে পানির দাম কমছে ২ টাকা ৬৮ পয়সা বা ১৭.৬৮ শতাংশ।
ওয়াসার মোট গ্রাহকের সাড়ে ১১ শতাংশ বাণিজ্যিক। তারা বর্তমানে প্রতি হাজার লিটার পানির জন্য ৪২ টাকা পরিশোধ করছেন। প্রস্তাবিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী সেই বিল বাড়বে ৮ টাকা। এখন থেকে দিতে হবে ৫০ টাকা।
এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণে ঢাকাকে ১০টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একেক জোনে একেক ধরনের দাম হতে পারে।
অপচয় কমাতে পারলে বিল কমত
অনুষ্ঠানে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান জানান, নগরীতে প্রতি দিন যে পরিমাণ পানি ব্যবহার হয়, তার মধ্যে এক চতুর্থাংশ থেকে এক পঞ্চমাংশই অপচয়।
তিনি জানান, প্রতিদিন ২১০ কোটি থেকে ২৫০ কোটি লিটার পানি ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০ কোটি লিটারই অপচয়।
ওয়াসা এমডি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই ৫০ কোটি লিটার পানি দিয়ে আরও ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ লোককে পানি দিতে পারতাম। এই পানি অপচয় না হলে পানি বিল আরও কম আসত।’