পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপনে কাজ শুরুর অনুমতি দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরায় পুরো সেতুর রেলপথের অংশ পরিদর্শন করে সেতু ও রেল কর্তৃপক্ষের যৌথ পরিদর্শক দল। পরে তারা জাজিরা প্রান্তে পৌঁছে রেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, ‘যৌথ টিম সেতু পরিদর্শন করেছে। গত ৬ জুলাই প্রকল্প পরিচালক আমাদের চিঠি দেন। ১৬ জুলাই আলোচনা শেষে আজ রেল কর্তৃপক্ষকে কাজের অনুমতি দেয়া হয়েছে। পুরো সেতুটি সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকবে, শুধু রেল ট্র্যাকটি তাদের আওতায় থাকবে।’
রেল সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমরা স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা ভাবছিলাম। এ বিষয়ে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। কিছু কাজ বাকি আছে, তবে সেগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ না। তাই আমাদের কাজের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
‘আমরা প্রথমে এটিকে পর্যবেক্ষণে নেব। আমরা মনিটর করব ভাইব্রেশনে (সড়কপথে যান চলাচলের) কোনো প্রভাব আছে কি না, এ জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিয়োগ করা হয়েছে। যদিও সেতু কর্তৃপক্ষ বলেছে, নকশা অনুযায়ী ভাইব্রেশনের প্রভাব থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাইব্রেশন টেকনিক্যাল বিষয়, পুরোটাই যন্ত্রের মাধ্যমে করা হবে। সে ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হবে না, হলেও এর সমাধান আছে।
‘আগামীকাল থেকে কারিগরি বিষয় পরিদর্শন করা হবে। ভাইব্রেশন বেশি হলে পরীক্ষামূলক কাজ করা হবে। তেমন বড় কোনো সমস্যা না থাকলে মূল কাজই শুরু করা হবে। পর্যবেক্ষণের জন্য এক সপ্তাহ সময় লাগবে।’
প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের যন্ত্রাংশ, রেললাইন, স্লিপার মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে রাখা হবে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কাজ শুরু করব। সড়কপথের কোনো বিঘ্ন না ঘটিয়েই আমরা কাজ শেষ করব।’
উদ্বোধন শেষে গত মাসের ২৬ তারিখ থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। নানা জটিলতায় আটকে ছিল সেতুর রেল সংযোগের কাজ। প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে এবার সেতুর নিচতলায় রেল লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। রেল লাইন বসানোর প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত দেখা গেছে নির্মাণশ্রমিকদের।
জাজিরা প্রান্তের ৪২ নাম্বার পিলারের পর থেকে ঢালাইয়ের গ্ৰান্ডিংয়ের কাজ করছে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। তাদের একজন মো. আসাদ বলেন, ‘রেলের স্লিপার ঢালাইয়ের জন্য সেতুর উপরের ঢালাইয়ের উপর গ্ৰান্ডিং করছি। মাওয়া থেকে পুরো অংশের কাজ শেষের পথে। সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে, তা শেষ করতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগতে পারে।’
পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে দায়িত্বরত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা যানবাহন চলাচলের সময় সেতুর কম্পন পরিমাপ করেছেন। এখানে কম্পনের মাত্রা মাত্র ০.১৩ পাওয়া গেছে। যা ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রার অনেক নিচে রয়েছে। কম্পনের কারণে সেতুতে রেলের কংক্রিট ঢালাইয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না।
‘তারপরও প্রয়োজনে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এতে করে সেতুতে চলাচলকারী যানবাহনের গতি কিছুটা কমানো লাগতে পারে। তবে আপাতত সে সম্ভাবনাও নেই। আশা করি রেলের কংক্রিট ঢালাইয়ে সময় সেতুর উপরিভাগে সব ধরনের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। আজ সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রেলওয়েকে করে কাজ করার জন্য লেয়ার ডেক হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ থেকেই তারা চাইলে সেতুতে রেল লাইনের কাজ শুরু করতে পারবেন।’