নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর সরকার প্রভাব বিস্তার করে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের প্রতিনিধিরা। রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা, সংসদে শক্তিশালী ও কার্যকর বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতি সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠকের সময় লিখিত বক্তব্যে এমন দাবি করেছে দলটি।
এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
আজ প্রথম দিনে চারটি দলের সঙ্গে সংলাপে বসছে ইসি। দ্বিতীয় দফায় বিএনএফের সঙ্গে সংলাপ করে।
এর আগে সকালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি।
এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ছাড়াও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
বিএনএফ তাদের লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে অদ্যাবধি একইভাবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করে আসছে বিএনএফ। শুরু থেকেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করতে হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে রাজনীতির হিসাবনিকাশ অনেক কঠিন হবে বলে আমাদের ধারণা। দেশে সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতি সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
দলটি আরও বলে, ‘ইতোমধ্যে বিএনপিসহ বেশ কয়কটি দল নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না। অন্যদিকে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে যেসব দল ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে তাদের প্রতি ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আন্তদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুসরণে পিছিয়ে আছে।’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ‘১৯৭২ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন পরিচালিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করাও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার সাংবিধানিক দায়িত্ব সরকারের। নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কোনো নির্বাচনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে মতপার্থক্য সুস্পষ্ট।’
অতীত অভিজ্ঞতায় বলা যায়, নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকার প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এ অবস্থায় অতীতের সব সন্দেহ-অবিশ্বাস মুক্ত হয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার দিকে দেশবাসী তাকিয়ে আছে।
দেশবাসীর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের প্রত্যাশা, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করতে প্রস্তুত আছে।’
বিএনএফ সংবিধান সমুন্নত রাখতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
বৈঠকে বিএনএফের প্রতিনিধি দলের পক্ষে দলটির প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা এস এম আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ১৩ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। যদিও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ জনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল।