নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো সংশয় না করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। বলেছেন, তারা কোনো আমোদ-ফুর্তি করতে আসেননি। আর সুষ্ঠু নির্বাচন করতে তার চেয়ে যোগ্য লোকের যদি খোঁজ পাওয়া যায়, তাহলে পদ ছাড়ার জন্য তাকে আহ্বানও জানাতে হবে না। তিনি নিজে থেকেই চলে যেতে রাজি থাকবেন।
রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের প্রথম দিন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন –এনডিএমের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়া কমিশন এর আগেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নিয়ে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হবে কি না, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দলগুলোর মতামত শুনে এখনও অবশ্য কমিশন তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।
দ্বিতীয় ধাপের এই সংলাপ করা হচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি নিয়ে।
২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে হতে যাওয়া এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এখন পর্যন্ত ঘোষণা হচ্ছে তারা বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে যাবে না।
বিএনপিকে আশ্বস্ত করে সিইসি বলেন, ‘অনেকে হয়তো ভয় পাচ্ছেন যে আমাকে হয়তো পদ ছেড়ে যেতে হবে। কারণ, নতুন করে সরকার হলে, তার একটা শর্ত থাকবে এই কমিশনে। এই নিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করবেন। ওখানে সামান্যতম কোনো ভয়ভীতি নেই। বলার আগেই পদ ছেড়ে চলে যাব।‘যদি শর্ত হয় নতুন নির্বাচন কমিশন অনেক যোগ্যতর লোক দ্বারা হবে, সেটা আমাকে কিন্তু আহ্বান করতে হবে না। আমি চাই সম্প্রীতি, রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য ও সুন্দর নির্বাচন। আমাদেরকে দিয়ে না, যে কাউকে দিয়ে করানোর জন্য যদি আমাকে এই পদ ছেড়ে যেতে হয়, আমাকে রিকোয়েস্ট করতে হবে না। রিকোয়েস্ট করার আগেই চলে যেতে পারব।‘কাজেই এই ভয় যেন বিএনপি বা অন্য কারও মধ্যে না থাকে। এই পদে কিন্তু আমরা আমোদ-ফুর্তি করতে আসি নাই। কঠিন একটি দায়িত্ব নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে এসেছি। কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, 'আমরা চাই সমঝোতার পথে দলগুলো এগিয়ে যাক, যাতে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়।'
রাজনৈতিক সমঝোতা, ঐকমত্যে গুরুত্ব দিয়ে সিইসি বলন, ‘আমরা বেদনাহত হই, যখন বক্তব্যগুলো সাংঘর্ষিক হয়।’
বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম ভোটের যে পরীক্ষা হয়, তাতে বড় ধরনের কোনো বিতর্ক হয়নি। শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ, কয়েকটি পৌরসভা এবং সবচেয়ে আলোচিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হয়েছে পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।
হাতিয়ায় দুটি ইউনিয়নে ভোট নিয়ে নানা অভিযোগ এলেও অন্য কোথাও ভোট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও নেতিবাচক কিছু বলেনি। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে একেবারে শেষ চারটি কেন্দ্রের ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেতার পর বিতর্ক উঠলেও পরে তা আর বাড়েনি।
কারণ, নির্বাচন কমিশন সব কেন্দ্রের ফল আলাদা ঘোষণা করার পর দেখা যায়, সেই চারটি কেন্দ্রে পরাজিত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর এজেন্টরা তাদের হারের ফলাফল আগেই নিয়ে এসেছেন এবং সেখানে তারা কোনো অভিযোগও করেননি।
সিইসি বলেন, 'অনেক রাজনৈতিক দল বলে আমরা নাকি একটি নির্দিষ্ট দলের এজেন্ডা নিয়ে এসেছি। দলটা কারা সেটা আমি বলতে চাচ্ছি না। তবে আমরা বাক্স খুলে দেখেছি বাক্সের কোথাও এজেন্ডাটা নেই। আমরা এখনও অতটা অসৎ হয়ে পড়ি নাই।‘আমি সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি ভবিষ্যতে চোর হব না ডাকাত হব সেটা বলতে পারব না। কিন্তু এজ অব নাও ওইভাবে কোনো রকমের পক্ষপাতিত্ব বা কারও এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার মানসিকতা এখনও আমাদের ভেতরে জন্ম নেয় নাই।’ এই সময় চার নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।