বরিশালের উজিরপুর উপজেলার পটিবাড়ী বিল এলাকায় ঘের দখলের প্রতিবাদ করায় শিক্ষকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
হামলার চিত্র ধারণ করতে গেলে এক সাংবাদিককেও লাঞ্ছিত করা হয় বলে জানা গেছে।
উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের পটিবাড়ী এলাকায় শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
আহত আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। লাঞ্ছিত হয়েছেন গাজী টিভির বরিশাল জেলা প্রতিনিধি নিকুঞ্জ বালা পলাশ।
শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল অভিযোগে জানান, সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খালেক আজাদের ছেলে মশিউর মিঞা তার ওপর হামলা চালিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর, তার ভাই মনির ও তাদের সহযোগীরা দুপুরে বাজারে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এসে হামলা, দোকান ভাঙচুর ও টাকা লুট করেছে।’
ওই শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের ঘের দখল করে সেখানে মাছ চাষ করছিলেন মশিউর মিঞা ও তার ভাই মনির মিঞা। আমরাও সেখানে মাছ ছেড়েছি, এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার ওপর হামলা করে।’
স্থানীয়রা জানান, পটিবাড়ী গ্রামের আড়াই হাজার বিঘার বিলে ঘের রয়েছে অনেকের। এর মধ্যে ওই শিক্ষকসহ ১৫ জনের ঘের দখল করে তাতে মাছ চাষ করে আসছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর মিঞা ও তার ছোট ভাই যুবলীগ নেতা মনির মিঞা।
ঘের দখল করে মাছ চাষ করার প্রতিবাদ করে আসছিলেন শিক্ষকসহ প্রকৃত মালিকরা। সেই দিন দুপুরে ঘেরের মালিকরা একত্রিত হয়ে ওই জলাশয়ে মাছের পোনা ছেড়ে দেন।
এ সময় শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল, স্থানীয় ইউপি সদস্য অমল কুমার মণ্ডল, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাহাদাত উল ইসলাম সুমনসহ অন্য ঘেরের মালিকরাও উপস্থিত ছিলেন। মাছের পোনা অবমুক্ত করার পর উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চলে যান। পরে সেখানে হামলার ঘটনা ঘটে।
উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল বলেন, ‘মনির ও মশিউর আমাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত ও জখম করেছে। অমল মণ্ডলকেও তারা মারধর করেছে। মারধরের ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিক নিকুঞ্জ বালা পলাশের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ সময় তারা আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইভো এন্টারপ্রাইজ ভাঙচুর ও ড্রয়ার ভেঙে ৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।
‘ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে থানা পুলিশকে অবহিত করেছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল বাশার লিটনকেও জানিয়েছি। তারা এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। থানায় লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বলেন, ‘মাছের পোনা অবমুক্ত করার পরপরই মনির মিঞা ও মশিউর মিঞা শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলকে মারধর করেছেন। এ সময় তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটও করা হয় বলে শুনেছি। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।’
এই বিষয়ে জানতে মশিউর মিঞাকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। পরে এসএমএস করলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
উজিরপুর থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ মোমেন বলেন, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। ঘটনা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’