ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষের ঢল নেমেছে বরিশাল নদীবন্দরে। সেই সুযোগে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন মালিকরা। সুযোগ বুঝে লঞ্চ স্টাফরা কেবিনের সামনে চাদর-তোশক বিছিয়ে বিক্রি করছেন টিকিট, এমনকি সিঁড়িতেও আসন বিক্রি হচ্ছে হরদম।
শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল নদীবন্দরে নোঙর করা লঞ্চগুলোতে দেখা গেছে এমন চিত্র। প্রতিটি লঞ্চের ডেকে (তৃতীয় শ্রেণি) যাত্রী পরিপূর্ণ। সেখানে পা ফেলার সুযোগ নেই। এরপর দেখা যায়, কেবিনের সামনের ফাঁকা জায়গাসহ সিঁড়ির পাশে চাদর ও তোশক বিছিয়ে বিশেষ আসন তৈরি করা হয়েছে। সেখানকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে দেদার।
লঞ্চের ছাদে, ইঞ্জিন রুমের পাশে, গলি, সিঁড়িতেও যাত্রীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।ছবি:নিউজবাংলা
পারাবাত-১২ লঞ্চের যাত্রী মোহাম্মদ আকরামুল বলেন, ‘বিকেল ৫টার দিকে লঞ্চঘাটে এসেছি। কেবিন নেই, ডেকেও জায়গা নেই। স্টাফরা সিঙ্গেল কেবিনের পাশে তোশক বিছিয়ে দিয়েছেন। এর জন্য ৫০০ টাকা আগাম দিতে হয়েছে। স্ত্রীর জন্য আরও ৩৫০ টাকা ভাড়া চেয়েছেন।’
কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের যাত্রী হুমায়ন কবির বলেন, ‘যতে টাকাই লাগুক, লঞ্চে উঠে জায়গা পেয়েছি এটাই বড় কথা। কাল অফিস আছে, যেভাবেই হোক সকালের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। ডেকে জায়গা পাইনি। তাই তিনতলায় কেবিনের সামনে চাদর বিছিয়ে বসেছি। লঞ্চের এক স্টাফ ৪০০ টাকা ভাড়া চেয়ে গেছেন।’
কীর্তনখোলা লঞ্চের ম্যানেজার বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আমরা নিচ্ছি না, সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছি। বেশি দামে আসন বিক্রির বিষয় আমাদের নজরে আসেনি। অনিয়মের ঘটনা পেলে স্টাফদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শনিবার অন্তত ১৬টি লঞ্চ ধারণক্ষমতার তিন গুণ যাত্রী নিয়ে বরিশাল নদীবন্দর ত্যাগ করেছে বলে অভিযোগ মিলেছে। লঞ্চ ছাড়ার ২ ঘণ্টা আগে থেকেই কানায় কানায় পূর্ণ ছিল প্রতিটি লঞ্চ। লঞ্চের ছাদে, ইঞ্জিন রুমের পাশে, গলি, সিঁড়িতেও যাত্রীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। রাত পৌনে ৯টার মধ্যে এসব লঞ্চ বন্দর ছেড়ে যায়।
প্রতিটি লঞ্চের ডেকে যাত্রী পরিপূর্ণ। ছবি:নিউজবাংলা
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, শনিবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে কীর্তনখোলা-১০ ও ২, কুয়াকাটা-২, মানামী, সুরভী-৭ ও ৮, পারাবত-৯, ১০ ও ১২, সুন্দরবন-১০ ও ১১, অ্যাডভেঞ্জার-১ ও ৯ এবং প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চ। এ ছাড়া ভায়া লঞ্চ মর্নিংসান-৯ ও রেডসান-৫ যাত্রী নিয়ে বরিশাল ছেড়েছে ঢাকার উদ্দেশে। শনিবার দুপুরে ডে সার্ভিস ওয়াটার বাস গ্রিনলাইন-৩ ঢাকার উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে রওনা হয়।
লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কঠোর নজরদারি ছিল। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও আমরা পাইনি।’
লঞ্চে যাত্রীদের চাপের পাশাপাশি বাসযাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে।
শনিবার সকালে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় সামাল দিতে লোকাল বাসগুলোও রাস্তায় নামে। তারা ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যাত্রী বহন করেছে জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে। বিএমএফ পরিবহনের বিরুদ্ধে বরিশাল থেকে ঢাকার ভাড়া ৬৫০ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ পথে যাত্রী ভাড়া ৩৫০ টাকা।