কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলইডি হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে সভায় কুমিল্লা-৪ আসনের সরকার দলীয় এমপি রাজি মোহাম্মদ ফখরুল ও দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে।
এমপির কিল-ঘুষিতে আহত উপজেলা চেয়ারম্যান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে কুমিল্লার দেবিদ্বারে ঝাড়ু মিছিল করেছে উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থক নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে সেখানে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর শনিবার সন্ধ্যায় জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ ভবনের এলইডি হলে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক চলছিল। সেখানে কুমিল্লা-৪ আসনের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ছাড়াও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী মাস্টার, দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ আরও কিছু নেতা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ২১ জুলাই দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়।
সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, সভার শেষ পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ কাউন্সিলর লিস্ট চূড়ান্ত করার প্রস্তাব দেন। এ সময় এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল উত্তেজিত কণ্ঠে আবুলে কালাম আজাদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এই... কিসের কাউন্সিলর লিস্ট?’
এক পর্যায়ে তিনি আবুল কালাম আজাদের মাথায় কিল-ঘুষি মারেন। এতে আহত হন উপজেলা চেয়ারম্যান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সভা শেষ না করেই জেলা নেতৃবৃন্দ উঠে আসেন।
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রৌশন আলী মাস্টার বলেন, ‘আমরা সুন্দর একটা মিটিং করছিলাম। মিটিং শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ কাউন্সিলর লিস্ট তৈরি করতে বললে এমপি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে তিনি উপজেলার চেয়ারম্যানের মাথায় কিল-ঘুষি মারেন। আহত উপজেলা চেয়ারম্যান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা মিটিং শেষ না করেই চলে এসেছি।’
উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘২১ জুলাই দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনের আগে চার ইউনিয়নের নতুন কমিটি ঘোষণা করার তাগিদ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সেই তাগিদের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকে কমিটি দেয়ার বিষয়ে বৈঠকে বসি।
‘উপজেলা নেতৃবৃন্দ ইউনিয়নে নতুন কমিটির তালিকা করেন। তখন আমি সম্মেলনের কাউন্সিল লিস্ট তৈরি করতে বলার সঙ্গে সঙ্গে এমপি আমাকে কিল-ঘুষি মারেন। মূলত ইউনিয়ন কমিটিতে নতুন নেতৃত্বে এমপির পছন্দের লোক ছিল না বলে তিনি আমাকে এভাবে আঘাত করেন।’
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন বলেন, ‘দ্বেবিদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক ছিল আজ (শনিবার)। আলোচনার শেষ পর্যায়ে একটা ইউনিয়ন নিয়ে তর্ক হওয়ার পর এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে।
‘আমাদের সেক্রেটারি রৌশন আলী মাস্টার একটি ঘোষণা দিয়েছেন। এটা একজনের পক্ষে গেছে, একজনের বিপক্ষে গেছে। এটা নিয়ে হাতাহাতি হয়। দুজনের মধ্যেই মারামারির ঘটনা ঘটেছে। পরে এমপি সাহেব একদিকে আর উপজেলার চেয়ারম্যান অন্যদিকে চলে যান।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলকে বার বার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠালেও উত্তর দেননি।
এদিকে খবর নিয়ে জানা গেছে, এমপি রাজি মোহাম্মদ ফখরুল ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের দলগত কোন্দল রয়েছে।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা নিয়ে স্থানীয় এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলসহ জেলার কয়েকজন নেতাকে প্রায় ২ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ সমর্থিত আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ।
গত ৩ জুলাই দেবিদ্বার উপজেলার নবিয়াবাদে বরকামতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে শেষে এমপি রাজি ফখরুলসহ বেশ কয়েকজন নেতার গাড়ি ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে আবুল কালাম আজাদের অনুসারীরা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্তত পাঁচজন নেতাকর্মী দাবি করেছেন, সেদিনের ঘটনায় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হয়। ওই ঘটনার কারণেই শনিবারের ঘটনা ঘটেছে।