ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনার পর বন্ধ হওয়া নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ এ সপ্তাহেও খুলছে না।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রথমে শনিবার ও পরে রোববার খোলার সিদ্ধান্ত হলেও তা হচ্ছে না।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ও নড়াইলের পুলিশ সুপার আজকে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আলোচনায় বসব।’
পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সপ্তাহে কলেজ খোলা হবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে আংশিকভাবে কলেজ খোলা হতে পারে।’
তবে কলেজের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচীন চক্রবর্তী বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য, ‘রোববার কলেজ খোলা হবে, সেভাবে নোটিশ দেয়া হয়ে গেছে। শুধু যাদের পরীক্ষা আছে, সেই সব শিক্ষার্থীর ক্লাস হবে। সেভাবে সব কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা আজ শনিবার কলেজ খুলতে চেয়েছিলাম। জেলা প্রশাসন থেকে বলেছিল, রোববার কলেজ খুলতে। তাই এক দিন দেরি করছি।’
এই সপ্তাহেও কলেজ বন্ধ রাখার বিষয়ে জেলা প্রশাসন থেকে তাকে কিছু জানানো হয়নি বলে দাবি করেছেন সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আরও দেরিতে কলেজ খোলার ব্যাপারে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিলে, সেভাবে কলেজ খোলা হবে।’
তবে এই মুহূর্তে কলেজে ফিরতে চান না ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে কলেজে যাওয়াকে নিরাপদ মনে করছি না। আর আমাকে কলেজ খোলার ব্যাপারে পরিচালনা পর্ষদের কেউ কিছু জানায়নি।’
‘ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে এক হিন্দু শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন’- এমন অভিযোগ তুলে কলেজে পুলিশের সামনেই শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করা হয়।
গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন স্বপন কুমার। মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে গত ১৮ জুন এ নিয়ে দিনভর চলে উত্তেজনা।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি।
শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ।
কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনার ৯ দিন পর গত ২৭ জুন দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন।
দণ্ডবিধির ৩৪, ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৪১, ৩৩২, ৩৫৩, ৩৫৫, ৪৩৬, ৪২৭, ৫০০ ধারায় করা এই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তারা হলেন শিক্ষার্থী রহমাতুল্লাহর রনি, মোবাইল ফোনের মেকানিক শাওন খান, অটোরিকশার চালক রিমন আলী, মাদ্রাসা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ও শ্রমিক মো. নুরুন্নবী। তাদের বাড়ি নড়াইল সদরের মির্জাপুর কলেজের আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহামুদুর বলেন, ‘ঘটনার দিন মনিরুল হ্যান্ড মাইকে উসকানিমূলক ঘোষণা দিয়েছিলেন। রিমন আলী স্থানীয়দের মধ্যে জনরোষ সৃষ্টি করেছিলেন এবং নুরুন্নবী কলেজ মাঠে গিয়ে নিজের গায়ের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন। এ ছাড়া রনি ও শাওন সরাসরি অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে তারা সবাই কারাগারে আছেন।’