বরের নাম ভানু আর কনে মতি। দুজনে মিলে ভানুমতি। ভানুমতির গায়ে জড়ানো মেরুন কাপড়।
আজ ভানুমতির বিয়ে। ক্ষুদ্রাকার এ বর কনেকে দেখতে ভিড় জমাচ্ছে উৎসুক গ্রামবাসী। তাদের যেন আগ্রহের শেষ নেই। আর হবেই না কেন! এ তো ব্যাঙের বিয়ে।
মন্দিরে বিয়ের বাজনা, সাদনা তলায় পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ, সাতপাকে বাঁধা, মালাবদল, সিঁদুরদান। সব রীতিই প্রস্তুত। সন্ধ্যা নামতেই এসব আয়োজনে হয়ে গেল বর-কনের বিয়ে। বিয়ের পূজারি হিসেবে ছিলেন নারায়ন চন্দ্র ঝাঁ।
দিনাজপুর শহরের রাজবাটী হিরাবাগান এলাকায় মন্দির প্রাঙ্গণে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে এই বিয়ের আয়োজন শুরু করা হয়। চলেছে রাত ১১টা পর্যন্ত।
গত কয়েক দিনে প্রচণ্ড গরম পড়েছে উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। বৃষ্টির অভাবে ক্ষেতে হাল চাষ ও আমন চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষকরা। বৃষ্টির অভাবে এক প্রকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির আশায়ই দিনাজপুরে এক জোড়া ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষ।
বরের মা সুমনা সরকার বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে আমাদের সম্প্রদায়ে এই রীতি দেখে আসছি। প্রতি বছর যখন অনাবৃষ্টি দেখা দেয়, তখন এই এলাকার সব বাসিন্দা দুটি ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেন। আমরা ব্যাঙের বিয়ের পরপরই বৃষ্টির দেখা পাই। এবারও বৃষ্টির দেখা পাব আশা করি।’
স্থানীয় সৌরভ অধিকারী বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় বাপ-ঠাকুর্দার কাছে শুনেছি দুই ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হয়। তাই আমরা শাস্ত্র মেনে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি। গ্রামের সব মানুষ টাকা ও চাল দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে সাহায্য করেছে। আমরা সেই টাকা ও চাল দিয়ে খিচুড়ির আয়োজন করেছি।’
স্থানীয় মনি রায় বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে বাবা ও মায়ের কাছে ব্যাঙের বিয়ের বিষয়ে শুনে আসছি। কিন্তু আজকে বাস্তবে দেখতে পেলাম। খুব মজা করছি।’
পূজারি নারায়ন চন্দ্র বলেন, ‘সনাতন ধর্মে ব্যাঙের বিয়ে দেয়া আমাদের লোকাচারে রয়েছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনাবৃষ্টির কারণে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছিলেন। যেহেতু এটা আমাদের লোকাচার। আমরা এই এলাকায় বেশ কয়েক বছর যাবৎ এ ধরনের বিয়ের আয়োজন করে আসছি। ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে আমরা ঈশ্বরের কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করি।’