দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালের এপ্রিলে নগরের শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে করোনা আইসোলেশন সেন্টার ঘোষণা করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান শুরু হয়।
রোগীদের চাপ সামলাতে ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে নতুন করে ১০টি আইসিইউ ইউনিটও চালু করা হয় সে সময়। তবে দুই বছর না ঘুরতেই আইসিইউর যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখানকার আইসিইউর ১৪টি এসির মধ্যে ১০টিই প্রায় ৬ মাস ধরে বিকল হয়ে আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বরাবর একাধিক চিঠি দিলেও এগুলো মেরামত হয়নি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। তাদের এই দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে হাসপাতালের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিকল হওয়া। গত বৃহস্পতিবার বিকল হয়ে যায় হাসপাতালের একমাত্র বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারটি।
এ ছাড়া ছাদের পলেস্তারা খসে হাসপাতালের অনেক কক্ষে এখন পানিও পড়ে।
শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মিজানুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের হাসপাতালের ১০টি এসি নষ্ট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হলেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আইসিইউর এসি শুধু ঠান্ডা বাতাস দেয় না, এর সঙ্গে রোগীর চিকিৎসাগত বিষয় জড়িত। অক্সিজেন সরবরাহসহ বিভিন্ন বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং একটি হাসপাতালের আইসিইউর বেশির ভাগ এসি নষ্ট থাকলে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মক ব্যাহত হয়।’
শুক্রবার পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ১১ জন রোগী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানান মিজানুর রহমান।
করোনার লক্ষণ নিয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমেনা বেগমের ছেলে লায়েক আহমদ বলেন, ‘আমার মা আইসিইউতে ভর্তি আছেন। কিন্তু আইসিইউর এসি কাজ করে না। এ ছাড়া রুমগুলো একেবারে স্যাঁতসেঁতে। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এমন পরিবেশে রোগী সুস্থ হওয়ার বদলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।’
এদিকে হঠাৎ করে হাসপাতালের ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় অব্যাহত লোডশেডিংয়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রোগী থেকে স্বাস্থ্যকর্মী সবাই দুর্ভোগে আছেন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের আরএমও মিজানুর রহমান জানান, ট্রান্সফরমারটি বিকল হওয়ার পর বিকল্প একটি সঞ্চালন লাইন ও জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। তবে এটা কত সময় টিকবে বলা মুশকিল। এর মধ্যেই ঘনঘন লোডশেডিং হচ্ছে।
এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুর রহমান জানান, সংস্কার বা উন্নয়নের জন্য তাদের কাছে আলাদা বরাদ্দ থাকে না। কোনো চাহিদা থাকলে তারা তা মন্ত্রণালয়ে পাঠান। বরাদ্দ আসলে কাজ হয়।
তিনি বলেন, ‘শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডের এসির বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানানোর পর গত মার্চে আমরা মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। শুধু এসির বিষয়ে নয়, হাসপাতালটির অন্যান্য কাজের জন্যও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও বরাদ্দ আসেনি, তাই কাজও করা হচ্ছে না।’
আর ট্রান্সফরমার বিকল হওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সোহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর সেখানে লোক পাঠিয়েছি। বিদ্যুতের লোকজনও সেখানে গেছেন। ট্রান্সফরমার সচল করতে কাজ চলছে। তার আগ পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।’
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধিভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। হাসপাতালটির বেহাল দশা প্রসঙ্গে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘এসি নষ্ট ছাড়াও হাসপাতালটিতে অনেক সমস্যা আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পানি পড়ে। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে এমন বাজে অবস্থা থাকলে স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হবেই। রোগীরাও সমস্যায় পড়বেন। তাই এসবের দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।’