ঈদের ছুটি কয়েকদিন আগে শেষ হলেও ঢাকামুখী মানুষের ভিড় তেমন ছিল বললেই চলে। তবে শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় বেড়েছে। রাজধানী ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে যাত্রীর চাপ অন্যদিনের তুলনায় বেড়েছে।
একদিকে যেমন মানুষ রাজধানীতে ফিরছেন, অন্যদিকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়াদের ভিড়ও দেখা গেছে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ দিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের সবগুলো লঞ্চ ডেকে পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঘাটে ভিড়ে। ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়েও কিছু লঞ্চ ঢাকার এসে পৌঁছায়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভিড় থাকলেও চাঁদপুর ও আশপাশের রুটগুলোর যাত্রী স্বাভাবিক ছিল।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সকাল থেকেই একে একে ভিড়তে থাকে বিভিন্ন রুটের লঞ্চ। দুপুরের পর থেকে গ্রিন লাইন-৩ ও সন্ধ্যার পর পারাবত- ৯, ১০, ১২ ও ১৮, মানামী, কুয়াকাটা-২, কীর্তনখোলা- ২ ও ১০, সুরভী- ৮ ও ৯, অ্যাডভেঞ্চার-১ ও ৯, সুন্দরবন-১২ লঞ্চসহ মোট ১৫টি লঞ্চ সদরঘাটে এসে পৌঁছায়।
ঢাকায় ফিরতে লঞ্চে মানুষের ঢল নেমেছে বলে জানিয়েছেন জাহাজ মালিক, স্টাফ ও কর্মকর্তারা।
মানামি লঞ্চের চালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার ঈদের আগে যেমন যাত্রী চাপ ছিল পরে তেমন ছিল না। আজ সরকারি ছুটির দিন তাই অনেকেই ঢাকা ফিরছে।’
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মো. আনোয়ার পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী থেকে ফিরেছেন ঢাকায়। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এমভি এ আর খান লঞ্চের টিকিট পেয়েছি। তবে লঞ্চে অনেক মানুষের ভিড় ছিল। ঠিকভাবে ঢাকায় আসতে পেরেছি এটাই অনেক।’
এদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশাল অঞ্চলগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রী কমায় ঢাকার সদরঘাটের চেনা রূপ অনেকটাই হারিয়েছিল। তবে ঈদের ছুটির সঙ্গে ফিরেছে চেনা সেই ভিড়। তবে ঈদের পরে ঢাকার সদরঘাটে ভিড় বাড়লেও আগের মতো নেই।
বরিশাল, ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা লঞ্চগুলোর কর্মীরা যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন। মানুষ একে একে লঞ্চে উঠছেন। বেশ কয়েকটা লঞ্চের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ডেক ভর্তি করে বসে আছে মানুষ। কেউ আবার কেবিন নিয়ে দরদাম করছেন।
বিকেল সাড়ে ৫টায় হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায় এমভি ফারহান-৩ নামের লঞ্চ। ছেড়ে যাওয়ার আগে লঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন ওই লঞ্চের কর্মী আবুল হোসেন। তিনি জানান, গত কয়েকদিন থেকে আজ বেশি লোক বাড়ি যাচ্ছেন। যারা ঢাকায় ঈদ করেছেন তাদের অনেকেই এখন গ্রামে যাচ্ছেন।
ঢাকা থেকে মনপুরা, হাতিয়ার দিকে যাবে এমভি তাসরিফ। লঞ্চের কর্মী রাহাত মিনহাজ বলেন, ‘লঞ্চে এরই মধ্যে পাঁচ-ছয়শ মানুষ উঠেছে। আর এক ঘণ্টা পর লঞ্চ ছাড়বে। এর মধ্যে আরও মানুষ উঠবে।’
ভোলার চরফ্যাশন ও বেতুয়া যাবে এমভি টিপু-১৩। লঞ্চটিতে গিয়ে দেখা যায়, ডেকভর্তি মানুষ। ভোলাগামী যাত্রী মাসুদুর রহমান বলেন, ‘কাপড়ের দোকানে কাজ করি। ঈদের আগের দিনও খোলা ছিল। তাই ভাবলাম ঈদ ঢাকায় করে যাই। তাড়াহুড়ো করে গিয়ে রাস্তায় ঈদ করার চেয়ে পরে যাওয়া ভালো।’
লঞ্চটির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ডেকে বসে আছেন শত শত মানুষ। হাতিয়া যাবেন পঞ্চাশোর্ধ্ব রহিমা বেগম। ঢাকায় ঈদ করেছেন তিনি। তার ছেলে সুজন মিয়া বলেন, ‘আমাদের আত্মীয়-স্বজন সবাই ঢাকায়। এজন্য ভিড় ঠেলে বাড়ি না গিয়ে ঢাকায়ই ঈদ করেছি। এবার একটু স্বস্তিতে বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসি।’
এদিকে নৌপথেই স্বস্তি খুঁজবেন যাত্রীরা এই আশা ছিল লঞ্চ মালিকদের। তবে ঈদের পর তা আবার কমে যাওয়ায় হতাশ তারাও। ডলার কোম্পানির ২৪টি লঞ্চের মালিক ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ আছে অনেক কিন্তু সেই অনুযায়ী যাত্রী নেই। তাই লঞ্চ কম ছাড়ছে। যেগুলো ছাড়ছে সেগুলোতে ভরে যাচ্ছে। ঈদের পর ও আমরা যাত্রী চাপ আশা রেখেছিলাম। কিন্তু পাইনি।’
লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগে যাত্রী চাপ বাড়ায় আশা পেয়েছিলাম। এখন সে আশা আর দেখছি না। সামনের দিনগুলিতে কি হয় দেখা যাক।’
বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মো. শহীদ উল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের পর যাত্রী চাপ স্বাভাবিক রয়েছে। আমাদের নিয়মিত লঞ্চগুলোই চলাচল করছে। অতিরিক্ত কোনো লঞ্চের প্রয়োজন পড়ছে না। ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’