খুলনার কয়রায় নারীকে বিবস্ত্র করে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগে ১৪ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
কয়রা থানার ওসি (পরিদর্শক-তদন্ত) মো. ইব্রাহিম আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই নারীর বাবা মামলা করেছেন। তাতে আসামি করা হয়েছে ওই নারীর চাচা-চাচাতো ভাইসহ ১৪ জনকে। এজাহারে বলা হয়েছে, জমির বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।
ওই নারী খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নির্যাতনের ঘটনাটি গত ১১ জুলাই সকালে উপজেলার মহেশ্বরপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে ঘটেছে বলে ওই নারী জানান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার বাবার জমি নিয়ে চাচাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। চাচারা বিভিন্ন সময় বাবার জমি দখল করতে আসে। তিন বছর আগে থেকে খুলনার আদালতে এই জমি নিয়ে একটি মামলা চলছে।
‘এরপরও তারা আমাদের সম্পত্তি দখলের জন্য পাঁয়তারা করছে। বারবার বাবার জমিতে ঘর বানাতে চাচ্ছে। তাদের সঙ্গে না পেরে, ঈদের বিকেলে থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ করি আমরা।’
ওই নারী আরও বলেন, ‘ঈদের পরদিন ১১ জুলাই সকালে আমার চাচা ও চাচাতো ভাই সাইফুল, সোয়েব, সালাহ উদ্দীন, ফিরোজসহ কয়েকজন মিলে আমাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় রাস্তায়। তারা আমাকে একাধারে মারধর করতে থাকে। আমার কাপড় খুলে রাস্তার পাশের মেহগনি গাছে বেঁধে আবারও মারধর করে। আমাকে কামড়ে দাগ বসিয়ে দেয়। তখন আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
ওই নারীর বোনের স্বামী বলেন, ‘বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে তারা গাছে বেঁধে রেখে আমার শ্বশুরের জমিতে ঘর তৈরি করছিল। তখন ঘটনাটি জানতে পেরে আমি ৯৯৯-এ ফোন দিই। পরে কয়রা থানার এসআই মাসুদের নেতৃত্বে দুই গাড়ি পুলিশ এসে গাছ থেকে দড়ি খুলে তাকে মুক্ত করে।’
অভিযোগ করা নারীর স্বামী বলেন, ‘ঘটনার সময়ে আমি সাতক্ষীরার প্রতাপনগরে ছিলাম। মোবাইলে খবর পেয়ে ফিরে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখন আমার চাচা শ্বশুররা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পুলিশকে ম্যানেজ করে সব মীমাংসা করার চেষ্টা করছে।’
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী বলেন, ‘জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন তাদের বিরোধ চলে আসছে। বেশ কয়েকবার সালিশ করা হলেও সমাধান না হওয়ায় এখন আর কেউ যায় না। ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। সংবাদ পেয়ে আমি পুলিশকে জানিয়েছিলাম।’
ঘটনার সময়ের একটি ছবি ওই নারী নিউজবাংলার প্রতিবেদককে দিয়েছেন। তাতে দেখা গেছে, প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় ওই নারীকে গাছে বেঁধে রাখা হয়েছে।
ছবির সত্যতা নিশ্চিতের জন্য কয়রা থানার ওসিকে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনার কোনো ছবি বা ভিডিও দেখিনি। তবে শুনেছি। সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে।’