বগুড়ার সোনাতলায় স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ও গবেষক ড. এনামুল হককে।
সোনাতলার খোদাদিলা গ্রামের বাড়িতে শুক্রবার দুপুরে তাকে দাফন করা হয়।
ড. এনামুলের মেয়ে তৃণা হক জানান, গ্রামের বাড়িতে নির্মিত মসজিদ প্রাঙ্গণে তার মায়ের পাশেই বাবাকে কবর দেয়া হয়েছে। তার বাবার এমনই ইচ্ছা ছিল। সে অনুযায়ী মায়ের কবরের পাশে আগে থেকেই একটি কবর বাঁধানো ছিল।
দাফনের আগে সকালে বগুড়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ড. এনামুলকে শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন স্বজন, পরিচিতজন, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ অনেকে।
জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হকও ছিলেন সেখানে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জাদুঘর বা পুরাকীর্তি বলতে ড. এনামুল হকের নাম উঠে আসে। আমার নিজেরও এই পুরাকীর্তির বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। সেই সুবাদে আমি তার নামের সঙ্গে অনেক আগে থেকে পরিচিত।
‘দেশে প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সবার অগ্রজ ড. এনামুল হক। এমনকি ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মশ্রী পদকেও ভূষিত হয়েছেন তিনি; যা শুধু বগুড়া নয়, দেশের জন্য গর্বের বিষয়।’
ড. এনামুল হক গত ১০ জুলাই দুপুরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান। সে সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
প্রথিতযশা এই প্রত্নতাত্ত্বিকের জন্ম ১৯৩৭ সালের ১ মার্চ বগুড়ার ভেলুরপাড়ায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ও ইতিহাস-প্রত্নতত্ত্বে স্নাতকোত্তর শেষে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দক্ষিণ এশিয়ার শিল্প নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬২ সালে তৎকালীন ঢাকা জাদুঘরে যোগ দেন ড. এনামুল। ১৯৬৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে অধ্যক্ষ ও ১৯৬৯ সালে পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। দেশ স্বাধীনের পর ঢাকা জাদুঘরকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রূপান্তর করা হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাকালীন মহাপরিচালক হিসেবে এনামুল হক যোগ দেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে তাকে ১৯৯০ সালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
২০১৪ সালে গবেষণাক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক পান। সংস্কৃতিতে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়।
সর্বশেষ প্রত্নতত্ত্বে বিশেষ অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ২০২০ সালে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে।