বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে সদর, তালতলী, পাথরঘাটাসহ ছয়টি উপজেলার অন্তত ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার একই উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে।
বুধবার রাতে পায়রা নদীর জোয়ারের পানির চাপে তালতলীর তেঁতুলবাড়ী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে আটটি গ্রামের কয়েক শ বাড়িসহ অন্তত ৫০টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়।
সদরের নলটোনা, এম বালিয়াতলী ও বদরখালী ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে বিষখালী ও পায়রা নদীর জোয়ারের তোড়ে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু গ্রাম। অন্যদিকে পূর্ণিমার প্রভাবে পাথরঘাটা উপজেলার বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার ১০টি গ্রাম।
এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। বসত ও রান্নাঘরে পানি প্রবেশ করায় বন্ধ রয়েছে রান্নাবান্না।
পাথরঘাটার ট্যাংরা, হাঁড়িটানা, কোরালিয়া, গহরপুর, নিজলাঠিমারা, রুহিতা, হাজির খাল, বাদুড়তলা, চরলাঠিমারা এলাকাসহ শতাধিক পুকুর ও ১০টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে।
এদিকে কোড়ালিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। অনেক বাড়িঘরে দুই থেকে তিন ফুট পানি প্রবেশ করেছে। এতে বসতঘরের মালামাল ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য খামার।
তালতলীর তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আমার বাড়িঘর সব তলিয়ে গেছে। এখন বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই পায়রা নদীর পাড়েই থাকি সেই জন্মের শুরু থেকে। বারবার বলার পরও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।’
একই এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে আমার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছরই বাঁধ ভেঙে এমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাকে।’
পাথরঘাটার রুহিতা গ্রামের সালেহা বেগম বলেন, ‘জোয়ারের পানি উঠেছে। এখন ছোট মেয়েকে নিয়ে খাটে বসে আছি। রান্নাঘর ও চুলা পানিতে ডুবে গেছে। তাই দুদিন ধরে রান্না হয়নি।’
পাথরঘাটার চরলাঠিমারা গ্রামের ছগীর মুন্সী বলেন, ‘উঠান কোমর-সমান পানি। রান্নাঘরে হাঁটু পর্যন্ত পানি, চুলা পানির নিচে। ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোনোমতে দোকান থেকে খাবার কিনে খেয়ে আছি।’
বেতাগী উপজেলা বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় প্লাবিত হয়েছে উত্তর বেতাগী, ঝিলবুনিয়া, ছোপখালী, ঝোপখালী, ভোলানাথপুর, জগাইখালী, কালিকাবাড়ি, গাবতলী, আলিয়াবাদ, জোয়ার করুনা, গ্রোমর্দন। এ ছাড়া ঝুঁকিতে রয়েছে বেতাগী শহর রক্ষাবাঁধ। জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে বামনা উপজেলার লক্ষ্মীপুড়া, চেচাং, ডুসখালী, আমতলী, গোলাঘাটা গ্রাম।
আমতলীতে চাওড়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়েছে বৈঠাকাটা, ঘটখালী, বেতমোর, চন্দ্রা, উত্তর কান্দা ও বালিয়াতলী। সেই সঙ্গে পৌরসভার আমুয়ার চরসহ ঝুঁকিতে রয়েছে আমতলী শহর রক্ষাবাঁধ।
পাউবো জানিয়েছে, পূর্ণিমায় সাগরে জোয়ারের পানি বেড়েছে। এতে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদের জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত তিন ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়ে ভাঙনকবলিত এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।
বরগুনা কার্যালয়ের পানি পরিমাপক মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘শুক্রবার রাতে বিষখালীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার একই উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারে প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সম্প্রতি জোয়ারের পানির তোড়ে যেসব এলাকার বাঁধ ভেঙেছে, ওইসব এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি মেরামতের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।’