প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছেন না ঝিনাইদহের ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তারা। ইউনিয়ন পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে দেয়া সরকারের ইন্টারনেট তেমন কাজে আসেনি, বলছেন উদ্যোক্তা ও সেবাপ্রত্যাশীরা।
দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে নামমাত্র। ফলে ইন্টারনেটের ধীর গতির কারণে নানা বিড়ম্বনায় উদ্যোক্তারা। তাই বাড়তি টাকা খরচ করে বেসরকারিভাবে ইন্টারনেট নিয়ে সেবাপ্রত্যাশীদের সেবা দিচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, গ্রামীণ জনপদে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা সরবরাহের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ঝিনাইদহের ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়। ইউনিয়নগুলোর মধ্যে সদর উপজেলার ১৭টিতে বিটিসিএল ও বাকি পাঁচটি উপজেলার ৫০টি পরিষদে ইনফো-সরকার তৃতীয় পর্যায় প্রকল্প পয়েন্ট অফ প্রেজেন্স (পিওপি) প্রতিষ্ঠা করে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের নেটওয়ার্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও তা তেমন কাজে আসেনি। ডিজিটাল সেন্টার থেকে বিভিন্ন সেবা দেয়ার সময় কম গতির কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। যে কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে সেবা নিতে হচ্ছে গ্রামের মানুষদের। উপায় না পেয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে বেসরকারিভাবে ইন্টারনেট সার্ভিস ও মোবাইল ডাটা ব্যবহার করছেন তারা।
সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা শাহীনুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইন্টারনেটের বর্তমান অবস্থা খুব খারাপ। অনেকদিন ধরে এভাবেই চলছে। মাঝে মাঝে নেট থাকে না। আর এখন যে গতি পাচ্ছি, তাতে ঠিকঠাকভাবে কাজ করতে পারি না।
‘দেখা যাচ্ছে, একটা ডকুমেন্ট আপলোড দিছি, নেটের কারণে ঘুরতেই থাকে। অনেক সময় লাগে। নেটের গতি খুবই স্লো।’
সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা গিয়াস উদ্দিন সেতু বলেন, ‘আমাদের সব কাজই ইউনিয়ন থেকে করা হয়। কিন্তু নেটের গতির কারণে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়।
‘সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে ইন্টারনেট দিল, কিন্তু যে মহৎ উদ্দেশ্যে দিয়েছে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলব নেটের গতি বৃদ্ধি করা হলে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।’
ইউনিয়নের সচিব প্রতাপ আদিত্য বিশ্বাস বলেন, ‘গ্রামীণ জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে এবং সরকারের সেবাগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ইন্টারনেট দেয়া হয়। কিন্তু এর গতি এতো কম যে, একটি পিসি চালানোও যায় না ঠিকভাবে। এতো কম গতি দিয়ে কোনো সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। তাই উদ্যোক্তারা মোবাইল ডাটা কিনে সেবা দেন। উদ্যোক্তাদের বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়।’
সাধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোহাম্মদ নাজির উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে দুই এমবিপিএস গতি দেয়া আছে কিন্তু তাও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। তাই বলব দুই এমবিপিএস থেকে বাড়িয়ে ছয় এমবিপিএস দিলে সেবা ভালোভাবে দেয়া সম্ভব হবে।’
এ সমস্যা সমাধানে আইসিটি কমিটিতে আলোচনা করেছেন জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমাদের আরও একটি প্রতিবেদন প্রণনয়নের কাজ চলমান রয়েছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের ইন্টারনেটের গতিবৃদ্ধির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বরাবর লিখেছি। আমরা আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে।’