বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার এখনও অনেক কম

  •    
  • ১৫ জুলাই, ২০২২ ০৮:০৩

বাংলাদেশে এখন প্রতি ৫৪ জনে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন একজন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ হার প্রতি ২০ জনে একজন। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় প্রতি চারজনে একজন।

সড়কে যানজট, দুর্ঘটনা কিংবা ট্রাফিক নিয়ম ভাঙার প্রশ্ন এলেই ‘যত দোষ, নন্দ ঘোষের’ মতো দায় চাপানো হয় মোটরসাইকেলের ওপর। অনেকেই মনে করছেন, সড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন, দুই চাকার বিশেষায়িত বাহনটির বিক্রি ও চলাচল সীমিত করা হোক।

সম্প্রতি পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের প্রথম দিন একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা সম্প্রতি অনেক বেড়েছে। তবে প্রতিবেশী দেশসহ অন্য অনেক দেশের তুলনায় এ দেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনও অনেক কম। সার্বিকভাবে এর উৎপাদন ও বিক্রিও তুলনামূলকভাবে কম।

জাপানের বহুজাতিক মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড ইয়ামাহার পরিচালিত এক বাজার জরিপ তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এখন প্রতি ৫৪ জনে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন একজন। অর্থাৎ এক শতাংশেরও নিচে। পাঁচ বছর আগে এ সংখ্যা ছিল প্রতি ১৬১ জনে মাত্র একজন। অথচ মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর দিক থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ হার প্রতি ২০ জনে একজন। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় প্রতি চারজনে একজন। অর্থাৎ ভারতে ৫ শতাংশ এবং ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় ২৫ শতাংশ লোক মোটরসাইকেল ব্যবহার করে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) পরিচালিত গবেষণার তথ্যমতে, ভিয়েতনামে প্রতি ১ হাজার মানুষের বিপরীতে মোটরসাইকেল আছে ৩৫৮টি। এর বিপরীতে বাংলাদেশে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য মোটরসাইকেল আছে মাত্র ৭টি।

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল বিক্রির বার্ষিক পরিমাণও অনেক কম। ইন্দোনেশিয়ায় বছরে ৩৮ লাখ, ভিয়েতনামে ২৮ লাখ, পাকিস্তানে ২০ লাখ ও থাইল্যান্ডে ১৫ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। এর বিপরীতে বাংলাদেশে এ সংখ্যা এখনও ৬ লাখের কম।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্থানীয় উৎপাদনও। পরিসংখ্যান বলছে, গত ৫ বছরে এখানে ব্যবহারকারী বেড়েছে প্রায় তিন গুণ (২ দশমিক ৯৮ গুণ)।

এই সময়ে চাহিদার ওপর দাঁড়িয়ে মোটরসাইকেলের স্থানীয় বাজারে বৈপ্লবিক অগ্রগতি হয়েছে। এখন দেশে সর্বনিম্ন ৭৭ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে প্রায় সব ব্র্র্যান্ডের যেকোনো মডেলের মোটরসাইকেল পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চলতি বছরের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এখন নিবন্ধিত মোটরসাইকেল আছে ৩৭ লাখ ১ হাজার ৭৮৬টি। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় আছে ৯ লাখ ৪৭ হাজার ১৩০টি।

সর্বশেষ আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ২৩ লাখের হিসাব আমলে নিলেও দেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর উল্লিখিত তথ্যের প্রমাণ মিলবে।

সম্প্রতি দেশে ভাড়ায় চালিত অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল বৃদ্ধির কারণে এর ক্রয়-বিক্রয় এবং নিবন্ধনের হারও ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। নিবন্ধিত প্রায় ৩০ লাখ মোটরসাইকেলের মধ্যে ২৫ শতাংশ চলাচল করছে ঢাকায়। চলতি বছরের মে পর্যন্ত ঢাকায় মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে ৫২ হাজার ১২৪টি এবং সারা দেশে ২ লাখ ৮৮১টি।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, বিআরটিএর নিবন্ধন ছাড়াও দেশে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন অনেক মানুষ। এ সংখ্যা কম করে হলেও লাখ পাঁচেক হতে পারে।

বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত সকল মোটরসাইকেল সচল আছে, এমন মনে করা যাবে না। সাধারণত মোটরসাইকেলের গড় আয়ুষ্কাল ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরা হয়। সেই বিবেচনায় একটা সময় পর তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তা ছাড়া নানা কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়েও মোটরসাইকেল ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে সার্বিকভাবে ব্যবহারে প্রবৃদ্ধি থাকলেও সড়কে মোটরসাইকেল এখনও অনেক কম।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, উন্নত গণপরিবহন ছাড়া মোটরসাইকেলের ব্যবহার কমানো কঠিন। তবে মোটরসাইকেলের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ঈদের সময় ফেরিতে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছে মোটরসাইকেল। ফাইল ছবি

স্ববিরোধী অবস্থানে সরকার

একদিকে মোটরসাইকেলের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, অন্যদিকে দেশে এর উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর তৎপরতা চলছে। শিল্প মন্ত্রণালয় চায় প্রতি বছর ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হারে মোটরসাইকেল উৎপাদন বাড়াতে। এভাবে ২০২৭ সালের মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বছরে ১০ লাখ ইউনিটে নিয়ে যেতে চায় সরকার। অপরদিকে এ খাতটির অগ্রগতি নিরবচ্ছিন্ন করতে বাজেটে নানাভাবে নীতিসহায়তা দিয়ে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অথচ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সড়কে বাহনটির অবাধ চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে দেশে মোটরসাইকেল শিল্পের সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত করছে।

দেশে ভারতের হিরো ও জাপানোর হোন্ডা ব্র্যান্ডের পরিবেশক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ নিউজবাংলাকে বলেন, মোটরসাইকেল মোটেও বিলাস পণ্য নয়, বরং দ্রুত সময়ে সবার গন্তব্যে পৌঁছানোর নিরাপদ ও অত্যাবশ্যকীয় বাহন। তাই মোটরসাইকেলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ তৈরি হচ্ছে এবং চাহিদা বাড়ছে। বৈশ্বিক বাস্তবতা ও সময়ের এই চাহিদার কারণে চাইলেই এটির চলাচল বন্ধ করা যাবে না। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্তকে তিনি সাময়িক বলেও মনে করেন।

১০ কোম্পানির বিনিয়োগ

বর্তমানে দেশে সর্বনিম্ন ৮০ সিসি থেকে সর্বোচ্চ ১৬০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন ফোর স্ট্রোক ও টু স্ট্রোক মোটরসাইকেল স্থানীয়ভাবে বাজারজাত হচ্ছে। এ খাতে বাজার ধরতে এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ১০ কোম্পানি বিনিয়োগে নেমেছে। এদের সম্মিলিত বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০ হাজার লোকের।

কোম্পানিগুলো যার যার সক্ষমতা অনুযায়ী ইতোমধ্যে দেশে মোটরসাইকেলের একটা স্থায়ী বাজার তৈরি করেছে। এখন চেষ্টা সেই বাজার অংশীদারত্বকে আরও বড় করার। এ জন্য ক্রেতা আকৃষ্ট করতে মোটরসাইকেলে যুক্ত করা হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। মোটরসাইকেলের মডেল, ডিজাইন ও সিসিতে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও দেশীয় ব্র্যান্ড ‘রানার’-এর উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমান খান নিউজবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত দেশে মোটরসাইকেল শিল্পের যে অগ্রগতি, সেটি সরকারের নীতি সহায়তার ওপর ভর করেই হয়েছে।

মোটরসাইকেলের বাজার কত বড়

বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএমএ) তথ্যমতে, ২০১৭ সালে দেশে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি হতো। ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২৩টিতে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে এর বাজার ছিল ৪ হাজার কোটি টাকার। সেটি ২০১৯ সালে বেড়ে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

সংগঠনটির তথ্যমতে, ২০১৪ সালে দেশে সবকটি ব্র্যান্ড মিলে মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ইউনিট। ২০১৮ সালে সেই বিক্রি বেড়ে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ ইউনিটে দাঁড়ায়। আর ২০১৯ সালে এসে এই বিক্রি দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ ইউনিট।

এর মধ্যে বাজার অংশদারত্বের হিসাব অনুযায়ী ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজের একক অংশীদারত্ব ছিল ৫৩ শতাংশ এবং টিভিএসের ১২ শতাংশ। এ ছাড়া ভারতীয় ও জাপানি ব্র্যান্ড হিরো হোন্ডার ১৫ শতাংশ এবং দেশীয় ব্র্যান্ড রানারের ৮ শতাংশ। বাকি ১২ শতাংশের বাজার ছিল দেশীয় ও বিদেশি অন্য ব্র্যান্ডগুলোর। তবে বাজার অংশীদারত্বে ক্রমশ প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ইয়ামাহা, সুজুকি ও মাহেন্দ্রাও।

এ বিভাগের আরো খবর