বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রাণোচ্ছল, পরোপকারী তুলির মনে কী দুঃখ ছিল

  •    
  • ১৪ জুলাই, ২০২২ ১৯:৫৯

তুলির ঘনিষ্ঠজন ও সাবেক সহকর্মী ফাতেমা আবেদিন নাজলার এক বর্ণনায় তুলির মানসিকতা উঠে এসেছে। ফেসবুকে একজনের কমেন্টের জবাবে তিনি লিখেছেন, ‘গত পরশু দিন যে মেয়েটা হা হা হিহি করল। গতকাল যে কষে বিজনেস প্ল্যান করল, দুপুরবেলা বান্ধবীদের বাচ্চাদের ভিডিওকলে দেখে হইচই করলো, বান্ধবীর মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে রাত জেগে এলো। সেই মেয়েটা আর যাই হোক বিষাদগ্রস্ত ছিল না। কিছুদিনের মধ্যে একটা টেলিভিশনে ওর জয়েনের কথা ছিল, ও বিষণ্ণ ছিল না। কিছু একটা তীব্রভাবে ওকে আঘাত করেছিল কিছু একটা।’

সাংবাদিক সোহানা পারভীন তুলি আত্মহত্যা করেছেন- আলামত দেখে মনে করছে পুলিশ। তবে এই নারী সাংবাদিক কেন এ পথ বেছে নিলেন, আপাতত তার কোনো জবাব নেই তদন্তসংশ্লিষ্টদের কাছে।

পুলিশ জানায়, তুলির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তার বন্ধু হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম রঞ্জু নামে এক সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পুলিশের ধানমন্ডি জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি অনুমতি ছাড়া তাকে ঢাকা না ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

তুলির রায়েরবাজার মিতালী রোডের বাসার দারোয়ান একটি মোটরসাইকেলের নম্বর পুলিশকে দিয়েছিল। তার সূত্র ধরেই পুলিশ রফিকুল ইসলাম রঞ্জুকে শনাক্ত করে। তুলির সঙ্গে সম্পর্ক ও নিয়মিত যোগাযোগের কথা রঞ্জু পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগ নাকচ করেছেন। পুলিশ তুলির ঘনিষ্ঠ আরও অনেকের বক্তব্য জানার চেষ্টা করছে।

তুলির জীবনাচরণ নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের বর্ণনায় উঠে এসেছে, তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বেশ আমুদে মানুষ ছিলেন। ঘনিষ্ঠজনদের নানা প্রয়োজনে পাশে পাওয়া যেত খুব মিশুক তাকে।

তুলির বিচ্ছেদ হলেও সে ধাক্কা তার এখন লাগার কথা নয়। সেটি বেশ কয়েক বছর আগের কথা। তিনি ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন। প্রায়ই ভ্রমণে যাওয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতেন।

ভাড়া বাসায় ছোট ভাইসহ অন্য আত্মীয়রা মাঝে মাঝে থাকলেও তিনি বেশির ভাগ সময় একাই থাকতেন। তিনি বন্ধুদের শিশুদের সঙ্গে বেশ সময় কাটাতেন। তাদের কিছু হলে নিজে ব্যথিত হতেন। মৃত্যুর আগের দিনও বন্ধুদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছেন।

এক বছর আগে চাকরি হারালেও তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করতেন। পাশাপাশি একটি অনলাইনভিত্তিক ফেসবুক পেজে নানা পণ্য বিক্রি করতেন।

তবে তার কেন এই অস্বাভাবিক মৃত্যু? এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।

তুলির ঘনিষ্ঠ, সাবেক সহকর্মী ও অনলাইনে ব্যবসার অংশীদার ফাতেমা আবেদিন নাজলার এক বর্ণনায় তুলির মানসিকতা উঠে এসেছে। ফেসবুকে একজনের কমেন্টের জবাবে তিনি লেছেন, ‘গত পরশুদিন যে মেয়েটা হা হা হিহি করল। গতকাল যে কষে বিজনেস প্ল্যান করল, দুপুরবেলা বান্ধবীদের বাচ্চাদের ভিডিওকলে দেখে হইচই করলো, বান্ধবীর মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে রাত জেগে এলো। সেই মেয়েটা আর যাই হোক বিষাদগ্রস্ত ছিল না। কিছুদিনের মধ্যে একটা টেলিভিশনে ওর জয়েনের কথা ছিল, ও বিষণ্ণ ছিল না। কিছু একটা তীব্রভাবে ওকে আঘাত করেছিল কিছু একটা।’

রাজধানীর হাজারীবাগ থানার রায়েরবাজার মিতালী রোডের একটি ছয়তলা ভবনের দোতলায় ভাড়া থাকতেন তুলি। বুধবার বিকেল ৫টার দিকে সেই বাসা থেকেই তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় বুধবার রাতেই এই নারী সাংবাদিকের ভাই হাজারীবাগ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।

পুলিশ জানায়, তুলির মরদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুক্তারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। তার অনেক বন্ধুবান্ধব আছে, তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। প্রাথমিকভাবে দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা আত্মহত্যা। কেউ মেরে তাকে ঝুলিয়ে রাখছে এ রকম না।

‘এটা আসলে হত্যা না। তবে এখানে কারও প্ররোচনা আছে কি না সেটা আমরা দেখতেছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহানা তুলি এক দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতায় জড়িত। সবশেষ ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত তিনি অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনে কর্মরত ছিলেন। এরপর কয়েক মাস সেন্টার ফর কমিউনিকেশন অ্যাকশন বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছিলেন।

বাংলা ট্রিবিউনের আগে তিনি কাজ করেছেন দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দৈনিক আমাদের সময়ে।

তুলির সাবেক সহকর্মী ফাতেমা আবেদিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আসলে কেউ বলতে পারছি না ও (তুলি) কেন আত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে, যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, সবার সঙ্গে খুব স্বাভাবিক কথাবার্তা বলেছে। আমার সঙ্গে গত সোমবার কথা হয়েছে। কোনো অস্বাভাবিক কিছু আমরা পাইনি।’

তুলির বান্ধবী রুকসানা মিলি বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৬টায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এইমাত্র তুলির মরদেহ নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালাম। একটু পরে তুলিকে দাফন করা হবে। এখন কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই আমি।’

তুলির বাড়ি যশোর সদরের হুশতলায়। বাদ মাগরিব হুশতলা কবরস্থান মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে তাকে সেখানে দাফন করা হয়। জানাজায় অংশ নেন সাংবাদিক, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ও এলাকাবাসী।

এ বিভাগের আরো খবর