বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রংপুরে গরমে হাসপাতালে রোগীর ভিড়

  •    
  • ১৪ জুলাই, ২০২২ ১৮:৫২

গত ৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে নতুন ৭১০ জন রোগি ভর্তি হয়েছেন, শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩৬৮ আর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন ১৯৯ জন। 

তীব্র রোদ আর গরম বাতাসে বিপর্যয় নেমে এসেছে রংপুরের জনজীবনে। দিনে ঝাঁঝালো রোদ আর রাতে তীব্র গরমে ঘরে ঘরে বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশি। গত তিন দিনে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগির সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। বাড়ছে মৃত্যু।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর জানিয়েছে, গত ৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে নতুন ৭১০ জন রোগি ভর্তি হয়েছেন, শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩৬৮ আর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন ১৯৯ জন।

এর মধ্যে মেডিসিন ওয়ার্ডে গত ১১ জুলাই ভর্তি ১১৮ জন, ১২ জুলাই ভর্তি ১৩২ জন আর ১৩ জুলাই ভর্তি ১৪০ জন। প্রতিদিনই রোগি ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। এই ওয়ার্ডে তিন দিনে মারা গেছেন ৩৩ জন। আর সাত দিনে মারা গেছেন ৬১ জন।

অন্যদিকে, শিশু ওয়ার্ডে সাত দিনে মারা গেছে ২৮ জন, হৃদরোগ বিভাগে মারা গেছেন ২২ জন।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, রোগিরা ওয়ার্ডে জায়গা পাচ্ছেন না। তাদের জন্য রুমের বাইরে বেড দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, গত সাত দিনে হাসাপাতালে যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের ৯০ শতাংশই মৌসুমি রোগ সর্দি, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত। সবার সাধ্যমত ট্রিটমেন্ট চলছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার পর রংপুরে তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৬ সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে।

তিনি বলেন, আরও ২-৩ দিন এমন অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল মোকাদ্দেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালের মেডিসিন, শিশু ওয়ার্ড ও হৃদরোগ বিভাগে গত তিন দিনে নতুন নতুন রোগি ভর্তি হয়েছে। এর সংখ্যা দ্বিগুণ। যারা আসছে, অধিকাংশই সিজনাল রোগী। আমরা প্রত্যেককেই বেটার ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি। অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।’

শহর ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ১১টার পর থেকে সড়কে মানুষের উপস্থিতি কম। দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও লোকজনের উপস্থিতি কম। পায়ে হেঁটে যারা বের হচ্ছেন, তারা ছাতা ব্যবহার করছেন। রিকশায় চলাচলকারী যাত্রীরা হুড তুলে দিচ্ছেন। গ্রামেও একই অবস্থা বলে জানা গেছে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে কথা হয় নীলফামারী সদরের মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদের পরদিন আমি আমার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসছি। ঈদের দিন সকাল থেকে জ্বর আর কাশি, কমতেছিল না। পরের দিন সকালে হাসপাতালে আনছি। একটু কমছে।’

রংপুরের মমিনপুর এলাকার আমির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলের বয়স ১১ মাস। হঠাৎ জ্বর। এলাকার ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়াইছি। কিছু হয় নাই। তাই পরশুদিন হাসপাতালে ভর্তি করাইছি।’

রংপুর উপশহর এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক রিপন মিয়া বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত গরম। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। কাজ কামের অনেক সমস্যা। গরমে আয়-রোজকার বন্ধ। বাড়ি থাকি বের হই, কিন্তু আসি গাছের তলোত বসি থাকি।’

রংপুর জিলা স্কুল গেটে ফুটপাত থেকে কেনা সরবত পান করছিলেন রিকশাচালক গোলাম মোস্তফা মুন্না। তিনি বলেন, ‘গরমে তেষ্টানো যায় না। যখন গাড়ি চালাই, তখন মাতাত ঝাঁপি দেই। এই গরমে যাত্রী নাই, তাই গাছের নিচোত দাঁড়াইছি। সরবত খাইতেছি। মানুষ রিকশায় উঠপের চায় না। দিনে ৩-৪’শ টাকা কামাই হয়।’

জিলা স্কুল মোড়ের শরবত বিক্রেতা ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘আমি আগে হাসপাতালের ভেতরে শরবত বেঁচাইছি। কয়দিন ধরি এটে বেঁচাই। দিনে ৪-৫ হাজার টাকা বেঁচাই। ভালো বিক্রি হওসে। প্রতি গ্লাস দশ টাকা করি নেওছি।’

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শামিম আহাম্মেদ বলেন, রংপুরে প্রচণ্ড গরম অনুভব হচ্ছে। এ অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ সময় বেশি করে পানি পান, ঠাণ্ডা জাতীয় পানীয় বিশেষ করে লেবুর শরবত, ডাবের পানি বেশি করে পান করার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

এ বিভাগের আরো খবর