বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যশোরে যুবদল নেতা হত্যায় আঙুল বিএনপি নেতার দিকে

  •    
  • ১৩ জুলাই, ২০২২ ২১:২০

সেই বিএনপি নেতা তার মেয়েকে এক যুবলীগ নেতার কাছে বিয়ে দিয়েছিলেন। সেই যুবলীগ নেতাকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই মামলার আসামি ছিলেন ধোনি। এক মাস আগে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

যশোরে যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধোনিকে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতাকে অভিযুক্ত করছেন স্বজনরা। ধোনির সঙ্গে তার পূর্ববিরোধ ছিল।

স্বজনদের অভিযোগ, পূর্ববিরোধের কারণে ধোনিকে লোক দিয়ে খুন করিয়েছেন শামীম আহমেদ মানুয়া নামে সেই বিএনপি নেতা। তিনি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক। তার সঙ্গে ধোনির বিরোধের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

কাদের দিয়ে খুন করানো হয়েছে, সেই নামও জানিয়েছেন স্বজনরা। পুলিশও একজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে। স্বজনরা যাদের নাম বলেছেন, তাদের একজন সেই ব্যক্তি।

ঘটনার পর থেকে মানুয়া ও তার ঘনিষ্ঠ যুবকরা পলাতক।

মানুয়া তার মেয়েকে এক যুবলীগ নেতার কাছে বিয়ে দিয়েছিলেন। সেই নেতাকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই খুনের মামলার আসামি ছিলেন ধোনি। গত মাসে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

এই হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী তিনজনকে খুঁজে পেয়েছে নিউজবাংলা। তারা কাছ থেকে দেখেছেন পুরো ঘটনাটি। ধোনিকে বাঁচাতে নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু যুবদল নেতাকে কোপানো থেকে রক্ষা করতে পারেননি।

খুন চার থেকে পাঁচ মিনিটে, বর্ণনা তিন প্রত্যক্ষদর্শীর

এ সময় ঘটনাস্থলে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ক্লিনার আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে পিন্টু বিশ্বাস। পুরো ঘটনাটি তিনি দেখেছেন।

নিজের জীবন বাজি রেখে তিনি সবার আগে ধোনিকে বাঁচাতে যান। কিন্তু পারেননি। তিনি এখন মর্মাহত।

তার বর্ণনা বলছে, পুরো ঘটনাটি ঘটেছে ৪ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে। আর এই হত্যায় অংশ নেয় ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী তিন যুবক।

নিউজবাংলাকে পিন্টু জানান, মঙ্গলবার ১১টার একটু পর বাসার সামনে শহরের শংকরপুর চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ে ইউসুফের চা দোকান থেকে চা পান করেন ধোনি। পরে স্থানীয় শান্তি কমিটির অফিসে বসেছিলেন তিনি।

বেলা ১১টা ২০ বা ১১টা ২২ মিনিটের দিকে আনসার ক্যাম্পের দিক থেকে একটি রিকশায় করে ২০-২২ বছর বয়সী তিন যুবক এসে সেই অফিসের সামনে দাঁড়ায়।

সেই তিনজনের মধ্যে একজন অফিসের ভেতর থেকে ধোনিকে তার জামার কলার ধরে বের করে নিয়ে আসেন। এরপর সড়কের মধ্যে তার ডান পায়ে রামদা দিয়ে কোপ দেন।

আহত ধোনিকে টানতে টানতে তার সামনে বৌরানী ফার্মেসির সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি পড়ে যান। সেখানে দুই যুবক তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। একজন ছুরিকাঘাত করতে থাকেন।

পিন্টু জানান, এই হত্যায় তিন যুবক থাকলেও গেঞ্জি ও টি-শার্ট পরা একজন পাহারা দিচ্ছিলেন।

তাদের সবার হাতে বড় হাঁসুয়া, একটি বড় রামদা ও দুজনের হাতে দুটি চাকু ছিল।

যশোর যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধোনি

পঞ্চাশোর্ধ্ব এই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমার চোখের সামনে লোকটা মারা গেল। খুব ভালো মানুষ ছিল। বাঁচাতে পারলাম না।’

আপনি সেখানে কী করছিলেন- এমন প্রশ্নে পিন্টু বলেন, ‘চা খেয়ে আমিও দোকানে বসেছিলাম। তার চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আমি দৌড়ে যাই ধোনির কাছে। কাছে যেতেই ওই তিনজন পালিয়ে যায়।’

যেই পথ দিয়ে ওরা আসে, সেই পথ আনসার ক্যাম্পের দিকে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে পালিয়ে যায় তারা।

তিন যুবক যখন পালাচ্ছিল, তখন ধোনিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় স-মিল শ্রমিক শাহজাহান শেখ ও রাজমিস্ত্রি শ্রমিক ফয়সাল হোসেন।

এই দুই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তারা যখন ধোনিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন, তখন তিন যুবকের মধ্যে একজন বড় রামদা উঠিয়ে বলেন, ‘এগিয়ে আসলে তোদেরও লাশ ফেলে দিয়ে যাব। এখান থেকে চলে যা।’

এরপর হাঁটতে হাঁটতে ওই তিন যুবক চলে গেলে ধনির কাছে যান এই দুই জন।

ধনি তখন লুঙ্গি পরা। রক্তে তার পুরো শরীর ভিজে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় স্বজনও স্থানীয়রা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ধোনির স্ত্রী শারমিন আক্তার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘রান্না করছিলাম। তখন রাস্তায় চিৎকারের আওয়াজ শুনে বের হই। বের হয়েই দেখি তাকে কয়েকজন যুবক কুপিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তবে কাউকে চিনতে পারিনি।’

হত্যা মামলা ধোনির বিরুদ্ধেও

ধনি বিরুদ্ধেও হত্যা, সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে ১২টি মামলা রয়েছে। যুবলীগ কর্মী ইয়াসিন আরাফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি দিনি।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বেজপাড়া ব্রাদার্স ক্লাবের সামনে হত্যার শিকার হন ইয়াসিন আরাফাত। এই মামলায় মাসখানেক আগে ধনি জেল থেকে বের হন।

মানুয়া নামে বিএনপির যে নেতার সঙ্গে ধনির বিরোধ ছিল, তিনি ইয়াসিন আরাফাতের শ্বশুর।

স্বজনের অভিযোগ মানুয়ার বিরুদ্ধে

ধোনির শ্যালক তপু রহমান এই হত্যায় মানুয়াকে সন্দেহ করছেন। তিনি হত্যায় অংশ নেয়া তিন যুবকের নামও বলেছেন। স্থানীয় যুবক রায়হান, রহিম, আকাশ বলে দাবি তার।

তপু বলেন, ‘এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শামীম আহমেদ মানুয়া ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। মানুয়াকে ধরতে পারলেই এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হবে।’

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘শামীম আহমেদ মানুয়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তার সঙ্গে ধোনির বিরোধ ছিল। তবে এটি হত্যার সঠিক কী কারণ সেটা বলতে পারছি না। এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের পুলিশ শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করবে এটাই প্রত্যাশা করি।’

হত্যার পর থেকে মানুয়া ও তার পরিবারের সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। বুধবার বিকেলে তার বাড়িতে যেয়ে প্রধান ফটক বন্ধ পাওয়া যায়।

নজরুল ইসলাম নামে এক প্রতিবেশী জানান, মানুয়া এবং তাদের কোনো স্বজন বাড়িতে নাই। এমনকি কোথায় গেছে কেউ বলতে পারছে না।

খুনি পূর্ব পরিচিত, একজন চিহ্নিত: পুলিশ

স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যা হয়েছে বলে নিশ্চিত পুলিশ। কর্মকর্তাদের ধারণা, খুনিরা ধোনির পরিচিতই।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক রূপন কুমার সরকার বলেন, ‘জড়িতদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

ধনি হত্যায় প্রাথমিক তদন্তে রায়হান নামে একজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাকে আটক করতে পারলে হত্যার জট খুলবে বলে ধারণা বাহিনীটির।

এই রায়হান বিএনপি নেতা মানুয়ার ভাগনে।

এলাকায় আতঙ্কএই হত্যার পর চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ে মানুষের উপস্থিতি আগের মতো নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আতঙ্কে অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

বুধবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে এখনও রক্তের দাগ। সেখানে অস্থায়ী বেধিতে কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতৃবৃন্দদের ফুলের শ্রদ্ধা জানানো ফুল পড়ে রয়েছে।

এদিন বেলা ১১টার দিকে শংকরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজার পর বেজপাড়া কবরস্থানে সমাহিত করা হয় ধোনিকে।

এ বিভাগের আরো খবর