কুয়াকাটার আবাসন, খাবার হোটেল, ট্যুর অপারেটরসহ অন্যান্য দোকানদার মিলে ঈদের তিন দিনের ছুটিতে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা আয় করলেও তা প্রত্যাশার তুলনায় অনেকাংশেই কম।
এদিকে ঈদের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ পর্যটকের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে কুয়াকাটা সৈকতে। তাই ব্যবসায়ীদের মলিন মুখে এবার হাসি ফুটতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ী ও পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, তাদের সংগঠনের ৭৬টি আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি তিনটি ভিআইপি হোটেল বাদে ছোট-বড় আরও প্রায় ৪০/৫০টি হোটেল রয়েছে। ঈদের ছুটিতে এসব হোটেলের কোনোটি শতভাগ বুকিং থাকলেও অনেকগুলোতেই বুকিংয়ের হার ছিল মাত্র ৩০ ভাগ। কাগজে-কলমে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে হোটেলগুলো প্রায় ৩৩ লাখ টাকা আয় করেছে।
আবার খাবার হোটেল মালিক সমিতির সূত্র জানায়, ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটার ৬৫টি খাবার হোটেল থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এ ছাড়া ট্যুর গাইড অপারেটররা সম্মিলিতভাবে ঈদের তিন দিনে দেড় লাখ আয় করার পাশাপাশি খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল বিক্রি করেছে বলে জানা গেছে।
কুয়াকাটার সবচেয়ে বড় সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাস এবং ওশান ভিউ হোটেলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আল-আমিন খান জানান, সিকদার রিসোর্টে ১০৯টি রুম এবং ৯টি ভিলা রয়েছে। এ ছাড়া ওশান ভিউ হোটেলে রয়েছে ৫৬টি রুম।
দুই হোটেলে পাঁচ শতাধিক পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারেন। এই দুটি হোটেলে একদিনে শতভাগ রুম বুকিং থাকলে অন্তত ১০ লাখ টাকা আয় হয়।
আল-আমিন খান বলেন, গত শনি, রবি ও সোম- এই তিন দিন কুয়াকাটার অন্যান্য হোটেল ফাঁকা থাকলেও আমাদের দুটি হোটেলই শতভাগ বুকিং ছিল। আগামী ১৫ তারিখ পর্যন্ত এভাবেই বুকিং আছে হোটেল দুটি।
হোটেল খান প্যালেসের মালিক আ. রহিম খান জানান, তার হোটেলে মোট ৫০টি রুম রয়েছে, যেখানে ১৩০ থেকে ১৫০ জন পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারেন। ঈদের পরের দিন শতভাগ বুকিং ছিল। সেদিন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ভাড়া পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন মাত্র ত্রিশভাগ রুম বুকিং ছিল।
রহিম খান বলেন, এখনও ভালো বুকিং আছে। ঈদের ছুটিতে আমরা কাঙ্ক্ষিত আয় করতে না পারলেও বর্তমানে তা পুষিয়ে নিতে পারব। আগামী ১৫/১৬ তারিখ পর্যন্ত আমাদের সব রুম বুকিং আছে। তবে আশা করেছিলাম, পদ্মা সেতু চালুর কারণে ঈদের ছুটিতে আমরা ভালো পর্যটক পাব। তাহলে গত দুই বছরের লোকসান আমরা কাটিয়ে উঠতে পারতাম।’
কুয়াকাটা গেস্ট হাউজের মালিক আ. মোতালেব শরীফ জানান, তার হোটেলে মোট ২০টি রুম আছে। এসব রুমে ৫০ থেকে ৬০ জন পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারেন। কিন্তু গত শনি, রবি ও সোমবারে তার হোটেলে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ভাগ রুম বুকিং হয়েছিল।
মোতালেব শরীফ বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর দিন থেকে পর্যটকদের জন্য আমরা বিভিন্ন রকমের ছাড়ের ব্যবস্থা করেছিলাম। আপাতত সেটি স্থগিত। ঈদের আগেই মূলত আমরা সেই ছাড়ের ব্যবস্থা স্থগিত করেছি। আশা করছিলাম, ঈদের ছুটিতে ব্যবসায় চাঙাভাব থাকবে। কিন্তু সেটি হলো না। এখন সরকারি ছুটি না থাকলে পর্যটকদের বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। এভাবে পর্যটক থাকলে আমাদের লোকসান আমরা পুষিয়ে নিতে পারব।’
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু জানান, তার নিয়ন্ত্রণে ৪০ জন গাইড আছেন। পর্যটকদের জন্য মোটরসাইকেল ভাড়া, পরিবহন টিকিট কাটা, হোটেল বুকিং ও খাবার হোটেল নির্ধারণসহ পর্যটনকেন্দ্রিক অন্যান্য কাজ করেন এসব গাইড। কিন্তু ঈদের ছুটিতে তারাও কাঙ্ক্ষিত লাভ করতে পারেননি।
বাচ্চু বলেন, ‘ওই তিন দিনে একজন সদস্য গড়ে প্রতিদিন ১২০০ টাকা আয় করেছেন। যদিও করোনার আগে ঈদের ছুটিগুলোতে গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার টাকা আয় করতে পারতেন তারা।’
তবে এবার ঈদের ছুটির পর গত মঙ্গলবার থেকে তারা ভালো আয় করতে পারছে বলেও জানান কে এম বাচ্চু।
কুযাকাটা খাবার হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম মুন্সি জানান, তাদের সমিতির আওতায় মোট ২০টি হোটেল রেস্তোরাঁ আছে। এ ছাড়া আরও ২০ থেকে ২৫টি হোটেল তাদের সমিতিতে আসার জন্য আবেদন করেছে।
সেলিম জানান, সমিতির অন্তর্ভুক্ত ২০টি হোটেলের মধ্যে মোট ৫টি বড় হোটেল আছে। যেগুলো গত ৩ দিনে মাত্র সাড়ে চার লাখ টাকার খাবার বিক্রি করতে পেরেছে। এ ছাড়া বাকি ১৫টি হোটেলের প্রতিটিতে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে খাবার বিক্রি হয়েছে।
তবে মঙ্গলবার থেকে হোটেলগুলোর এই আয় দ্বিগুণেরও বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান সেলিম। আগামী ১৫ তারিখ পর্যন্ত তাদের সব খাবার হোটেল এভাবেই চলবে বলে আশাবাদী তিনি।
কুয়াকাটা পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক মো. মফিদুর ইসলাম জানান, পৌরসভার লাইসেন্স করা খাবার হোটেলের সংখ্যা ৬৫টি। পৌরসভার তালিকাভুক্ত আবাসিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টের সংখ্যা ১২০টি। এসব হোটেলে সব মিলিয়ে গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ রাত্রিযাপন করতে পারে।
এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের পণ্য বেচাকেনার জন্য পৌর এলাকায় অন্তত ৭০০ দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে পর্যটকরা বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনেন।
মফিদুর বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে এখানকার ব্যবসায়ীরা তেমন লাভের মুখ না দেখেলেও ছুটির পরপরই ব্যবসায়ীরা লাভ করতে শুরু করছেন। আমার মনে হয়, তিন দিনের কম আয় এই চার দিনে পুষিয়ে নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।’
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন জানান, পর্যটকদের অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার থেকে কয়েকটি খাবার হোটেলে অতিরিক্ত দাম আদায়কালে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর জরিমানা আদায় করেছে।
তিনি জানান, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার কাঙ্ক্ষিত ব্যবসা করতে পারেননি কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা। ঈদের ছুটিতে সেই পরিমাণ পর্যটকের উপস্থিতি ছিল না কুয়াকাটায়।
তবে আশা করা হচ্ছে, পর্যটক সমাগম বাড়তে শুরু করায় ঈদের ছুটির কাঙ্ক্ষিত ব্যবসা এখন করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।