সমুদ্রের ঢেউ এসে চুমু খাচ্ছে বেলাভূমিতে। আর প্রখর রোদে নারী-পুরুষকে আহ্বান জানাচ্ছে শীতল স্নান করার। সেই আহ্বান উপেক্ষা করে এমন সাধ্যি কার! তাই ঈদের ছুটির চতুর্থ দিনে লাখো পর্যটকে মুখিরত কক্সবাজারের সাগরতীর। সাগরের নোনাজলে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা ভ্রমণপিপাসুরা।
পর্যটক বাড়ায় খুশি পর্যটন ব্যবসায়ী, সৈকতের ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফার, ওয়াটার-বিচ বাইক চালক, বেলাভূমির ঘোড়াওয়ালা আর খুচরো ব্যবসায়ীরাও।
বালিয়াড়ি আর ঢেউয়ে চলছে ঈদের টানা ছুটি উদযাপনের উৎসব। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখরিত এখন কক্সবাজার। সাগরতীরে বসেছে ঈদের ছুটির মিলনমেলা। সবাই মেতেছে ঈদ আনন্দ উৎসবে।
কক্সবাজার শহরের কলাতলী, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা এলাকার হোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি হোটেলে অন্তত ৮০ শতাংশ কক্ষে এখন পর্যটকরা অবস্থান করছেন। ১২ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত টানা ছয় দিন পর্যটকে ভরপুর থাকবে হোটেল-গেস্ট হাউসগুলো। পর্যটক টানতে এসব প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়ার ঘটনাও ঘটছে।
বুধবার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, সকাল ১০টার পর থেকে সমুদ্রসৈকতে নামতে শুরু করে দর্শনার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে। বিকেলের দিকে এই ভিড় আরও বেড়ে যাবে।
সিলেট থেকে আসা পর্যটক কামরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে তিনি টেকনাফ যাবেন। সেখানকার মিয়ানমার সীমান্ত, ঐতিহাসিক প্রেমকাহিনির মাথিনকূপ, নাফ নদের বুকে জেগে ওঠা জালিয়ারদিয়া, ন্যাচার পার্ক দেখে টেকনাফ থেকেই রাতের বাসে ঢাকায় ফিরবেন।
মিরপুর থেকে আসা সৈকত আলী বলেন, ‘ঈদে আনন্দ তো সবচেয়ে বেশি কক্সবাজারে। তাই কক্সবাজারে তিন দিনের জন্য ছুটে এলাম। আজ সৈকতে গোসল ও ঘোরাফেরা করব পরিবার নিয়ে। আর কাল মেরিন ড্রাইভ ও পাটুয়ারটেক যাব।’
সৈকতের ফটোগ্রাফার রহিম উদ্দিন বলেন, ‘গত দুদিন খুবই মন খারাপ ছিল। কারণ এই দুদিনে ৫০০ টাকাও আয় হয়নি। তবে আজ প্রচুর পর্যটক এসেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পর্যটকদের ছবি তুলে ২ হাজার টাকা আয় করেছি।’
জেডস্কিচালক মুরশেদ বলেন, ‘পর্যটক এলেই আমরা খুশি হই। এখন লাখো পর্যটক সৈকতে। এতে আমাদের ব্যবসাও ভালো হচ্ছে।’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, ঈদের দিন পর্যন্ত হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসগুলোর প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ কক্ষ খালি ছিল। তবে ঈদের পরদিন সোমবার চিত্র কিছুটা পাল্টে যায়। এখন অনেকটাই লোকারণ্য সৈকত। তারা আশা করছেন, আগামী কয়েক দিনে সমাগম আরও বাড়বে।
বৈরী আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকায় সবগুলো পয়েন্টে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে
সি সেইফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফগার্ড মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। তাই সবকটি পয়েন্টে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। তবে লাইফগার্ডদের নির্দেশনা মানছেন না পর্যটকরা। তবুও তাদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক টহল ও টাওয়ারগুলোতে নজরদারি চলছে। চেষ্টা করছি, পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তা দিতে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘কোনো পর্যটক যেন এখানে এসে হয়রানির শিকার না হয়, ভ্রমণের ভালো স্মৃতি নিয়ে যেন ফিরতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি।’