ঈদ যাত্রায় উত্তরবঙ্গের পথে দুঃসহ যানজট কেন হয়েছে, ছুটি শেষে সেটি জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, ‘একটা রুটে প্রবলেমটা বেশি হয়েছে—উত্তর জনপদ। হওয়ার কথা ছিল না, কেননা আমাদের সিক্স লেন রোড অলরেডি হয়ে গেছে।’
ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘‘ঈদের ছুটিতে উত্তরবঙ্গের যাতায়াতে শুধু যমুনা সেতুর ওপরেই ৪৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ব্যবস্থাপনা ত্রুটি না হলে এতগুলো দুর্ঘটনা কেন ঘটবে?’
‘পদ্মা সেতুর ব্যাপার হচ্ছে, সেখানে কোনো গাড়ি যদি অ্যাক্সিডেন্ট হয় সেই গাড়িটা সরানোর জায়গা আছে পাশে কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতুতে সেই জায়গাটা নেই। সেখানে সামনেরগুলো সরিয়ে গাড়ি সরাতে হয়। অনেকগুলো নষ্ট হয়েছিল, সেই কারণে আমরা খুবই চাপের মধ্যে ছিলাম।
চলতি বছর ঈদুল ফিতরে বাড়ি ফেরা ছিল নির্বিঘ্ন। তবে এবারের পরিস্থিতি পুরো উল্টো।
উত্তরের পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পরিস্থিতি এবার দুঃসহ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে কাটিয়ে ক্লান্ত হয়েছে লাখো মানুষ। ঢাকা থেকে বগুড়ায় যেতে ৩৫ ঘণ্টায় লাগার ঘটনাও ঘটেছে।
পদ্মা সেতু হয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে নির্বিঘ্ট চলাচল করলেও এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতেই কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ ঈদযাত্রায় এই ভোগান্তির এক কারণ। চলতি বছর ঈদুল ফিতরে আনুমানিক ২০ লাখের মতো মানুষ মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরেছে। এবার সে সুযোগ না থাকায় সড়কের পাশাপাশি ট্রেনেও উপচে পড়া যাত্রী দেখা গেছে।
আবার ঈদুল ফিতরে ছুটি ছিল বেশি। ঈদের ছুটির আগে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি ও মে দিবসের ছুটি মিলিয়ে মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল আগেভাগেই। আবার তারও আগে পোশাক কারখানার ছুটি হয়েছিল ধারাবাহিকভাবে। কিন্তু এবার কোনো পরিকল্পনা ছিল না।
সড়ক মন্ত্রীর কথাতেও বিষয়টি উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘একে তো ঈদের ছুটির পরিমাণ কম ছিল, মাত্র তিন দিন। অন্যদিকে সাভার আশুলিয়া চন্দ্রা এলাকার গার্মেন্টসগুলোর ছুটি পর্যায়ক্রমে দেয়ার কথা বললেও গার্মেন্টস মালিকরা সেই ছুটি দিয়েছেন এক দিনেই। এতে করে একসঙ্গে সড়কের ওপর প্রচণ্ড রকম চাপ তৈরি হয়।’
‘বিজিএমইএ-বিকেএমইএকে বারবার অনুরোধ করেছি পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার চন্দ্রা-নবীনগর এলাকায় যানজট হয়েছে—হঠাৎ করে পোশাক শ্রমিকদের একসঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যেটা পর্যায়ক্রমে করার কথা ছিল। সেটা তারা করেনি বা করতে পারেনি।’
মন্ত্রী বলেন, এই ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব শুধু সড়ক পরিবহনের প্রকৌশল বিভাগের ওপরেই বর্তায় না, সামগ্রিকভাবে হাইওয়ে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ দায়িত্বশীল সবার ওপরেই বর্তায়। তবে অস্বীকারের উপায় নেই, এই যানজটের পেছনে যে ব্যবস্থাপনা ত্রুটি ছিল।
এবারের অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যতে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন কাদের। বলেন, ‘কিছু অব্যবস্থাপনা তো হয়েছেই, আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই। অতীতের ভুলগুলো থেকে আগামীর পথকে আরও মসৃণ করতে চাই।’
দক্ষিণের পথে আরও দুই সেতু সেপ্টেম্বরে
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে এবার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছেন-এটা স্বস্তির কারণ ওবায়দুল কাদের। তবে এই পথের যাত্রা আরও মসৃন হবে বলে মনে করছেন তিনি। বলেন, ‘এখানে একটা অংশ মিসিং রয়েই গেছে, সেটি হলো কালনা সেতু এবং অষ্টম চীন-বাংলা মৈত্রী বেকুটিয়া সেতু।
‘আমরা আশা করছি আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই দুটি সেতু চালু করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি অথবা ভার্চুয়ালি সেতু দুটি উদ্বোধন করবেন।’
ঢাকা-চট্টগ্রামে মহাসড়ক হবে ছয় লেনের
মন্ত্রী বলেন, ঈদ যাত্রায় চট্টগ্রামে যাতায়াতে সেতুর কোনো সমস্যা না থাকলেও এই পথে দুর্বলতা হচ্ছে সড়কগুলো ৪ লেনের। এতে পরিবহনের চাপ বাড়ার ফলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
বিদ্যমান চার লেনের সড়ককে বাড়িয়ে ছয় লেন করে এই সমস্যার সমাধানের পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ফোর লেন থেকে সিক্স লেনে উন্নীত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। অচিরেই এর কাজ শুরু হবে।’
রাজধানীর যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীর যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেও মনে করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হবে। এ ছাড়া গাজীপুর অংশের এক্সপ্রেস ওয়েও আগামী নির্বাচনের আগেই উদ্বোধন হবে।’
ঈদযাত্রায় বাইক বন্ধ কেন
এই বিষয়টি নিয়ে সড়ক মন্ত্রী বলেন, ‘সবার সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের পক্ষ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা। কিছু কিছু অ্যালাউ করা হয়েছে আবার কিছু কিছু আদেশ লঙ্ঘন করে হাইওয়েতে এসেছে। আসলে মোটরসাইকেল, যে যানগুলো ছোট ছোট বিশেষত ৩ চাকার; এগুলো নিয়ন্ত্রণ না হলে সমস্যার সৃষ্টি হয়।’