ট্রেনের টিকিট বিক্রি নিয়ে নানা সময় নানা ধরনের অনিয়ম ও অভিযোগ উঠেছে সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে। ঈদযাত্রার টিকিটেও প্লাটফর্মটিতে টিকিট কাটতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। এবার ট্রেনের বগি না থাকলেও সে বগির টিকিট বিক্রি করেছে সহজ ডটকম।
ট্রেনটি জামালপুর এক্সপ্রেস। ট্রেনটি মঙ্গলবার সকালে জামালপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে তার কিছু আগে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে ঘোষণা করা হয়, জামালপুর এক্সপ্রেসের নির্দিষ্ট সে বগি যাবে না।
এরপর অ্যানাউন্সার যাত্রীদের সে বগিতে যারা টিকিট করেছেন তাদের টাকা ফেরত নেয়ার অনুরোধ জানায়।
যাত্রীদের এমন বিড়ম্বনায় ফেলার জন্য কমলাপুর রেল স্টেশনে কর্তৃপক্ষ দায়ী করেন সহজ ডটকমকে।
কমলাপুর রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই বগি চলাচলের অনুমতি নেই। কিন্তু বিষয়টি না জেনে সহজ ডটকম টিকিট বিক্রি করে ফেলেছে।
জামালপুর এক্সপ্রেসের ‘গ’ বগি কোথায় গেল জানতে চাইলে কমলাপুর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আফসার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বগি নষ্ট হয় নাই। এটা চালানোর অর্ডারই ছিল না। ৯ তারিখ পর্যন্ত অর্ডার ছিল, তখন পর্যন্ত বগি চলাচল করছে। ১০ তারিখ বন্ধের পরে আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত ওই বগি চলাচলের অর্ডার হয়নি। কিন্তু আমাদের সহজ মনে করছে যে, আগের মতই ঈদের পরেও চলবে।... সে হিসেবে তারা টিকিট বিক্রি করছে।’
এটা কি সহজের ভুল? জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘সহজের মিসটেক এটা। ওরা মনে করেছে, শিওর না হয়ে এটা করেছে।’
সহজের ভুল নাকি রেলওয়ের ভুল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের (রেলওয়ের) ভুল না, এটার তো অর্ডারই নাই।’
সকাল সোয়া ১০টায় গিয়ে দেখা যায়, জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি ছাড়াই যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নেয় রেল। পরে সে বগির যাত্রীরা কমলাপুর রেল স্টেশনের পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাদের না পেয়ে তারা সাংবাদিকদের সামনে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ওই বগিতে ৭০ জন যাত্রী ছিল।
মোক্তার হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, কমলাপুর রেল স্টেশনে এসে ট্রেন খুঁজে পেলেও বগি খুঁজে পাননি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বগিটি এসি বগি ছিল। এখন স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে টাকা ফেরত নিতে। তো আমরা যদি টাকা ফেরতই নেব তাহলে এত ভোগান্তি কেন করালো।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেকজন বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। ট্রেন পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছে তারাও কিছু জানে না। যারা টিকিট বিক্রি করে তারাও বলেছে তারা কিছু জানে না। আর স্টেশন ম্যানেজার ও মাস্টারকে তো খুঁজেই পাইনি।’
ইমামুল হোসেন তালুকদার নামের এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সকালে অনলাইনে টিকিট কাটছি। এখানে আসলে বলা হচ্ছে বগি যাবে না, টিকিটের টাকা ফেরত নেন।’
তিনি বলেন, ‘রেলের যারা দায়িত্বশীল তারা সাধারণ মানুষকে মানুষই মনে করে না৷ এ জন্যই এ ধরনের ভোগান্তি।’
জালালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে ১০টায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলাপুর রেল স্টেশনে ঘোষণা করা হয় বগি না যাওয়ার তথ্য ও টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নেয়ার কথা। তার ১০ মিনিট পরেই ট্রেনটি গন্তব্যে ছেড়ে চলে যায়।
ট্রেনের পরিচালক জানান, বগি থাকলেও সেটা অকেজো।
কিন্তু কমলাপুর স্টেশনের স্টেশন মাস্টার তার এ বক্তব্যের সঙ্গে এক মত নন বলে জানান।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনের সহজ ডটকমের দায়িত্বশীলরা কেউ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি৷
বিষয়টি নিয়ে সহজ ডটকমের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহাত আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এ বিষয়ে এখনও কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে জানাব।'
সিডিউল বিপর্যয় নেই
কমলাপুর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আফসার উদ্দিন বলেন, ‘কোনো ট্রেন লেট নাই, আজকে রাইট টাইম। ঈদের পরে কোনো ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় নাই। সব সময় মত যাচ্ছে এবং আসছে। হয়তো কাল-পরশু থেকে ঢাকায় ফেরত মানুষের চাপ বাড়বে।’