ময়মনসিংহের তারাকান্দার সেই খেতা শাহর ভক্ত শফিকুল ইসলামের স্ত্রীকে গাজীপুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জয়দেবপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে সোমবার রাত ১২টার দিকে রাবেয়া খাতুনকে উদ্ধার করা হয়।
তারাকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মালেক নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি, শফিকুলের স্ত্রী জয়দেবপুর এলাকার একটি বাড়িতে আছেন। সেখানে অভিযান চালিয়ে রাবেয়াকে উদ্ধার করা হলেও খেতা শাহ সেখানে ছিলেন না। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
‘বিকেলে রাবেয়াকে ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হবে।’
গত ২২ জুন দুপুর ১২টার দিকে রাবেয়া বাবার বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় যাওয়ার কথা বলে খেতা শাহকে নিয়ে বের হন। এরপর দুজনই নিখোঁজ হন।
এ ঘটনায় খেতা শাহের নামে ২৪ জুন সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেন শফিকুল ইসলাম। রাত ১২টার দিকে তার অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়।
ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় কাঁথাকে বলা হয় খেতা। ময়মনসিংহের তারাকান্দার টিকুরী এলাকায় সব সময় ছেঁড়া কাঁথা শরীরে জড়িয়ে রাখতেন খেতা শাহ নামের এক ব্যক্তি। তিনি যা বলতেন তাই হতো- এমন বিশ্বাসে অনেক লোক তার ভক্ত হয়ে যান৷
বৃদ্ধ বয়সে মারা যান সেই ব্যক্তি। কিন্তু থেকে যান ভক্তরা। একপর্যায়ে নির্মাণ করা হয় মাজার। নামকরণ করা হয় ‘খেতা ছিঁড়ার মাজার’। প্রতি বছর পালন করা হয় ওরস।
এবারও চার মাস আগে ওরস শুরু হয় ওই মাজারে। বরাবরের মতো এবারও হাজারো ভক্তসহ লোকজন আসেন মনের বাসনা পূরণ করার আশায়।
পাগলবেশে ফজলুল হক তালুকদার নামের একজন আসেন মাজারটিতে। ৬০ বছর বয়সী ফজলুলের বাড়ি নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার পাইলাটি গ্রামে।
বড় দাড়ি, লম্বা গোঁফ ও ছেঁড়া কাঁথা গায়ে জড়িয়ে সারাক্ষণ মাজারে বসে সময় কাটাতেন। কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে মাজারের নামের সঙ্গে নাম মিলিয়ে নিজেকে ‘খেতা শাহ’ হিসেবে পরিচয় দেন৷
আধ্যাত্মিক ফকির হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পেতে কথাও বলতেন খুব কম। এভাবে গ্রামের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন তিনি।
তাকে বাবা ডেকে অনেকে মনের বাসনা পূরণ করতে দোয়া চেয়ে নিতেন। যারা তার কাছে আসতেন, তাদের অনেককে মাথায় হাত ভুলিয়ে ঝাড়ফুঁক দিতেন। এভাবে কয়েক দিনেই তার ভক্তের সংখ্যা বেড়ে যায়।
আধ্যাত্মিক ফকির ভেবে খেতা শাহের ভক্ত হয়ে যান শফিকুলও। সংসারের উন্নতি আর মনের বাসনা পূরণ হবে- এমন ধারণা থেকে দুই চাচার পরামর্শে নিয়ে আসেন বাড়িতে।
খেতা শাহকে বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় দেন শফিকুল। সেখানে রেখেই আপ্যায়ন শুরু করেন। স্ত্রীকেও বলতেন ঠিকঠাক সেবা করতে।
এরপর তার স্ত্রীকে নিয়েই উধাও হন খেতা শাহ।