বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চামড়ায় পোস্তাকে পেছনে ফেলল আমিনবাজার

  •    
  • ১১ জুলাই, ২০২২ ১৯:১৩

চামড়া নিয়ে সারা দেশে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সার্বিকভাবে এবার কোরবানির চামড়া ব্যবস্থাপনার কাজটি খুব সুন্দরভাবে হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় চামড়ার ভালো দামও মিলেছে: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দিক থেকে প্রথম দিন এবার পুরান ঢাকার প্রখ্যাত পোস্তাকে পেছনে ফেলে দিল আমিনবাজার।

রাজধানীতে চামড়ার বড় আড়ত লালবাগের পোস্তায় ঈদের দিন গরুর চামড়া এসেছে দেড় লাখের মতো। অন্যদিকে আমিনবাজার আড়তে ঢুকেছে এর দ্বিগুণ, প্রায় তিন লাখ।

ব্যবসায়ীদের মতে, পোস্তার তুলনায় আমিনবাজারে চামড়া বেশি যাওয়ার মূল কারণ সাভারে ট্যানারি শিল্পকেন্দ্রিক বাণিজ্য। পোস্তার তুলনায় সেখানে যাতায়াত সহজ। পোস্তায় প্রবেশপথে যানজট থাকে অনেক বেশি। আশুলিয়া, হেমায়েতপুরসহ ঢাকার চারপাশে ধারেকাছের চামড়াও ঢুকেছে আমিনবাজারে।চামড়ার দাম নিয়ে এবার কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ীর অসন্তোষ ছাড়া সার্বিকভাবে তেমন কোনো অঘটন ঘটেনি। দেশের কোথাও চামড়া পচে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বিক্রি করতে না পেরে বা দামে হতাশ হয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটেনি।কোরবানিদাতা এবারও চামড়ার একটি বড় অংশ দান করেছেন মাদ্রাসায়। ঢাকার বাইরে সেই চামড়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিক্রি করেছে স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছেই। সেই চামড়ার বেশির ভাগ স্থানীয়ভাবেই লবণজাত ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। ফলে এবার ঢাকায় কাঁচা চামড়া ঢুকেছে কম।রাজধানীতে আড়তদাররা তাদের কেনা চামড়ার ৭০ শতাংশ লবণজাত করতে সক্ষম হন রাত সাড়ে ১০টার মধ্যেই। শতভাগ চামড়ায় লবণ মিশিয়ে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় রাত ২টার ভেতরে।ট্যানারি মালিকরা ঈদের পঞ্চম দিন থেকে আড়তদারদের কাছ থেকে লবণযুক্ত চামড়া কেনার কথা থাকলেও প্রায় অর্ধশত ট্যানারি মালিক ঈদের দিনই ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে সরাসরি কাঁচা চামড়া কিনেও ট্যানারিতে নিয়ে গেছেন। মূলত কম দামে পেতেই তারা আগাম চামড়া কিনেছেন।

কোরবানির চামড়া ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি দেখতে ঈদের রাতেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল পোস্তার চামড়া আড়ত পরিদর্শনে যায়। পরদিন দলটি যায় আমিনবাজারের আড়তে। শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানার নেতৃত্বে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি এবং ভোক্তা অধিকারের ওই দলটি পরিদর্শনে যায় সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে। তারা ঢাকা লেদার পরিদর্শন করেন।

চামড়ার দাম নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘চামড়া নিয়ে সারা দেশে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সার্বিকভাবে এবার কোরবানির চামড়া ব্যবস্থাপনার কাজটি খুব সুন্দরভাবে হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় চামড়ার ভালো দামও মিলেছে।‘কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ীর অভিযোগ বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কারণ, সরকার আগেই লবণযুক্ত চামড়ার দর বেঁধে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটি কাঁচা চামড়া কিনে লবণ মেশানোসহ প্রক্রিয়াজাত করতে ৩০০ টাকার খরচ আছে। এখন কেউ যদি ব্যবসা না বুঝে মাঠ পর্যায়ের কাঁচা চামড়া লবণযুক্ত চামড়ার দামেই কেনেন, তাহলে তো সেটি তার ব্যবসায়িক অজ্ঞতা এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারি না।’এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা পোস্তা ও আমিনবাজার আড়ত পরিদর্শন এবং তাদের চামড়া কেনার কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। ঢাকায় কাঁচা চামড়া আকারভেদে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে দেখেছি। শুধু তাই নয়, গুণগতমান অনুযায়ী কিছু বড় চামড়ার দাম আমরা এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যেও কেনাবেচার তথ্য পেয়েছি।’কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি আফতাব খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার কোরবানির মৌসুমে চামড়া ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে ভালো দিক হলো চামড়ার পচন ঠেকানো গেছে। প্রচণ্ড গরমে অনেক চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু স্থানীয়ভাবেই বেশির ভাগ চামড়া লবণজাত করে সংরক্ষণ করা সম্ভব হওয়ায় শেষ পর্যন্ত চামড়া রক্ষা পেয়েছে।

‘ঢাকায় দ্বিতীয় দিনেও অনেক কোরবানি হয়েছে। দ্রুত নিয়ে আসায় সেগুলোও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই লবণ মেশানো সম্ভব হয়েছে।’

বর্তমানে দেশে ২২০টি ট্যানারির মধ্যে ১৫৪টি সচল আছে। এসব ট্যানারির ৬০ শতাংশের জোগান আসে প্রতি বছর কোরবানির মৌসুমে। এর মধ্যে গরুর চামড়া মেলে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ। খাসি, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার চামড়া মেলে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী সব মিলে প্রতিবছর ২৫ কোটি বর্গফুট চামড়ার প্রক্রিয়াজাত হয় এসব ট্যানারিতে, যার ৭৬ শতাংশ রপ্তানি হয়।ঈদে এবার গরুর চামড়া বর্গফুট প্রতি ৭ টাকা ও খাসির চামড়ার দাম ৩ টাকা বাড়িয়েছে সরকার।অবশ্য এই দর ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ভিন্ন হবে। ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়া ৪৭ থেকে ৫২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

এই দর ২০২০ সালে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

ঢাকার বাইরে এবার সারা দেশে ট্যানারি মালিকরা লবণযুক্ত গরুর চামড়া কিনবেন ৪০ থেকে ৪৪ টাকা দরে। গত বছর এই দাম ছিল ৩৩-৩৭ টাকা। আর ২০২০ সালে ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা বর্গফুট।

এ ছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দর ৩ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। গত বছর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা, যা ২০২০ সালে ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

অবশ্য এবার ছাগলের চামড়া ১০ টাকা করে কেনার পরেও বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কারণ, তারা এই চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। কোথাও কোথাও কোরবানির পর ছাগলের চামড়া বিনা মূল্যে দিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এ বিভাগের আরো খবর