টানা কয়েক বছরের চেষ্টাতেও নগরবাসীকে নির্ধারিত স্থানে কোরবানিতে উদ্বুদ্ধ করতে না পারায় হতাশ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
তবে ব্যতিক্রম রাজধানীতে মিরপুর-৭ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত প্যান্ডেলে ছয় হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। এই ওয়ার্ডের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন তিনি।
রাস্তার বদলে বাসার ভেতরে বা পাড়া-মহল্লায় একটি নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দেয়ার অনুরোধ করেছেন মেয়র। এলাকাবাসী একটি জায়গা ঠিক করে করপোরেশনকে জানালে প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন আতিকুল।
ঈদের পর দিন সোমবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন মেয়র।
কয়েক বছর ধরেই রাজধানীবাসীকে যেখানে সেখানে কোরবানির বদলে একটি নির্ধারিত স্থানে পশু জবাইয়ের অনুরোধ করে আসছে নগর কর্তৃপক্ষ। বেশ কিছু এলাকা নির্দিষ্ট করে দিয়ে করপোরেশনের খরচে মাংস বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
নির্ধারিত স্থানে পশু জবাইয়ের জন্য প্যান্ডেল স্থাপন, সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
মেয়র বলেন, ‘আমরা এ বছর তিনটি জায়গায় প্যান্ডেল করেছিলাম। একটি ছিল বারিধারায়, একটি ছিল নিকুঞ্জতে, বাকি সাতটি ছিল মিরপুর সাত নম্বর ওয়ার্ডে। বারিধারার প্যান্ডেলে মাত্র ১৩টি গরু কোরবানি হয়েছে, নিকুঞ্জতে প্রায় ২০টির মতো গরু কোরবানি হয়েছে।’
তবে মিরপুরের সাত নম্বর ওয়ার্ডবাসীতে মুগ্ধ হয়েছেন আতিকুল। বলেন, ‘সেখানে সাতটি প্যান্ডেলে প্রায় ৬ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে।’
ওয়ার্ডবাসীর এই এগিয়ে আসায় তাদের উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দের ঘোষণাও দেন মেয়র। বলেন, ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাজ করার জন্য সাত নম্বর ওয়ার্ডে ১৫ কোটি টাকার রাস্তার জন্য বরাদ্দ করা হবে। বিশেষ পুরস্কার পাবে তারা।’
এবার কেবল তিন জায়গায় প্যান্ডেল করার কারণও জানান মেয়র। বলেন, ‘আমরা গতবার ৫৪টা ওয়ার্ডে প্যান্ডেল করেছিলাম। এতে জনগণ সেভাবে সাড়া দেয়নি।
‘ঐতিহ্যগতভাবে আমরা কোরবানি যার যার বাসার সামনে দিই। আপনি কোরবানি দিন কিন্তু রাস্তার ওপরে কেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব কোরবানি বাসার ভেতরে দিন, অথবা পাড়া-মহল্লায় নিজের একটা জায়গা করে নিন। আমাদের সঙ্গে আসুন, বসুন, আমাদের সঙ্গে আলাপ করুন প্যান্ডেলের সকল দায়িত্ব আমরা নেব। কিন্তু আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে যে আপনার ওই প্যান্ডেলের নিচে কোরবানি দেবেন।’
হবে আধুনিক জবাইখানা
আরেক প্রশ্নে আতিকুল জানান, গাবতলী হাটের পাশে একটি আধুনিক জবাইখানা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জবাইখানা আমরা সেভাবে ডেভেলপ করতে পারি নাই। জবাইখানা নিয়ে আমার চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে বলেছি, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে বলেছি, আমাদের মিরপুরে গাবতলী হাটের পাশে কীভাবে একটি আধুনিক জবাইখানা তৈরি করা যায়। ঈদের পর থেকে এটা নিয়ে কাজ শুরু করব।’
মোহাম্মদপুর, মিরপুরের জবাইখানাকে সেকেলে উল্লেখ করে সেগুলোরও উন্নয়নের কথা বলেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, গাবতলী পশুর হাটের পাশেই আধুনিক জবাইখানা করতে। এটি আমার জন্য বড় একটি দায়িত্ব হয়ে গেছে। এটির ওপর সর্বোচ্চ ফোকাস দিয়ে কাজ করতে হবে।’
বর্জ্য অপসারণে সাফল্য দাবি
ঘোষণা অনুযায়ী কোরবানির ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এবার পশুর বর্জ্য অপসারণ হয়েছে বলে দাবি করেন মেয়র আতিকুল।
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম ২৪ ঘণ্টায় না, ১২ ঘণ্টায় উত্তর সিটির বর্জ্য অপসারণ করব। আমরা যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম তা নগরবাসীর সহায়তায় গতকাল রাত ১০টার মধ্যে সকল বর্জ্য অপসারণ করতে পেরেছি। এ জন্য করতালি দিয়ে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘নগরবাসী এগিয়ে আসলে সবই সম্ভব। ঈদের আগের দিন সকাল থেকে ১১টা পর্যন্ত আমরা ৪ হাজার ২৬৭ ট্রিপে মোট ১৯ হাজার ২২৩ টন বর্জ্য অপসারণ করেছি।’
মেয়র বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়ে আগে ক্যালকুলেশন করেছি প্রতিটি ওয়ার্ডে কী পরিমাণ বর্জ্য হবে, কতগুলো গাড়ি দরকার, কত শ্রমিক দরকার। উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে আমরা ৬ লাখ ৫০ হাজার বর্জ্য পলিব্যাগ দিয়েছি। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি ৩৫ কেজি পর্যন্ত ভার বহন করতে পারবে এই পলিব্যাগ।
‘আমরা ব্লিচিং পাউডার দিয়েছি প্রায় ৬০ টন। স্যাভলন দিয়েছি আনুমানিক ৯০০ ক্যান। একটি ক্যানে পাঁচ লিটার স্যাভলন থাকে। সিটি করপোরেশন থেকে আমরা ৬০০ যানবাহনের ব্যবস্থা করেছিলাম। দিন-রাত তারা কাজ করেছেন।’
রাজধানীতে তিন দিন ধরে কোরবানির যে প্রবণতা আছে, সেটি তৃতীয় দিনে না দেয়ার অনুরোধও করেন আতিকুল। বলেন, ‘আজকেও যারা কোরবানি দিচ্ছেন, কোরবানি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ময়লা নিয়ে যাচ্ছি।
‘আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, আপনারা যারা আগামীকাল কোরবানি দিতে চান, তারা আজকে কোরবানি দিয়ে দিলে আমাদের অনেক সুবিধা হয়। আমরা নগরটাকে আজকের মধ্যেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে পারি।’