বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যাওয়া ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে দুটি দল বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে মিল রেখেই কথা বলছে। অন্তত দুটি দলের নেতারা বলছেন, তারা ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের চেষ্টা করছেন, যদিও এখনও বলার মতো কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এখন পর্যন্ত তিনটি ইসলামপন্থি দল বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়েছে। অবশ্য এই দলগুলো চলে যাওয়ার পরও জোটে দলের সংখ্যা কমেনি। এর কারণ জোট ছেড়ে যাওয়া দলগুলোর একটি অংশ একই নামে আরেকটি দল করে জোটে রয়ে গেছে।
এই দলগুলোর মধ্যে দুটি দল বিএনপির মতোই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছে। তারা ভোটগ্রহণে বিএনপির মতোই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে।
পঞ্চম দল হিসেবে গত বছরের ১ অক্টোবর বিএনপির জোট ছেড়ে যায় খেলাফত মজলিস। সে সময় জোট ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবেই বলা হয়, স্বকীয়-স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের রাজনীতি করবে দলটি।
কিন্তু পরে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। জোট ছাড়ার দুই মাসের মাথায় বিএনপির পথেই হাঁটতে দেখা গেল দলটিতে। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে গিয়ে বিএনপির দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করে খেলাফত মজলিস।
সংলাপে দলের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের বলেন, ‘শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনই নিরপেক্ষ হয়েছে বলে সর্বজন স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিবাদে হেফাজতের সহিংসতার ঘটনায় আহমাদ কাদের গ্রেপ্তার হন। যিনি হেফাজতের নায়েবে আমির ছিলেন।
তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি। এ কারণে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় দলটির নেতাদের মধ্যে।
আহমাদ কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন স্বতন্ত্রভাবে কর্মসূচি দিচ্ছি। তবে নির্বাচন কীভাবে করব সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না। আমরা পরিস্থিতি দেখছি, দেখার পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে, নতুন জোটবদ্ধ হব, না জোটে (২০ দলীয় জোট) যাব।
‘তবে এখনই এ বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। সময়ই বলে দেবে আমাদের কী করা উচিত।’
২০২১ সালের ১৪ জুলাই জোট ছাড়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। দলের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে একলা চলছি। ভবিষ্যতের বিষয়ে সময়ে কথা বলবে। আপাতত সাংগঠনিক বিষয়গুলো জোরদার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপির আন্দোলনে যাওয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের দলীয় ফোরামে এখনও হয়নি।
‘আমরা জোটকেন্দ্রিক রাজনীতি করার কারণে দলীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখন সাংগঠনিক দিককে গুরুত্ব দিয়ে আমরা ফলাফলও পেয়েছি। অলরেডি আমাদের একাধিক চেয়ারম্যান দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছে।’
এই অংশের আরেক নেতা আবদুর রব ইউসূফী। যিনি ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাবেক সিনিয়র নায়েবে আমির ছিলেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জোট ছেড়েছি, তবে ভবিষ্যতে কী করব সেটা ভবিষ্যৎ বলে দেবে। এখনও সেটা নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
২০ দলীয় জোটে ফিরে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এমনও হতে পারে, আমরা একাই নির্বাচন করলাম। আবার কারও সঙ্গে জোট বেঁধেও নির্বাচন করতে পারি।’
সবার আগে ২০১৬ সালের ৭ জুন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যায় মুফতি ফজলুল হক আমিনী প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট। তবে জোট ছেড়ে যাওয়ার সময় কোনো কারণ বলেননি দলটির নেতারা।
ইসলামী ঐক্যজোট এখন একটি ভিন্ন জোট গড়ার চেষ্টা করছে বলে জানাচ্ছেন দলটির নেতারা। তবে তাদের সেই চেষ্টা এখনও সফলতার মুখ দেখেনি।
দলের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পরবর্তী সময়ে ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের প্রয়াস চালাতে পারি।’
বিএনপি যেসব দলকে নিয়ে সরকারবিরোধী অবস্থানের কথা বলছে, সেটি নিয়ে আপনার দলের কী সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি তাদের কৌশলে আগাবে, আমরা আমাদের কৌশলে আগাব।’
বিএনপির সঙ্গে এক টেবিলে বসে আলোচনা করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আমার জবাব আপনাকে দিয়ে দিয়েছি।’
ধর্মভিত্তিক তিনটি দল ছাড়াও ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যায় লেবার পার্টির একটি অংশ। ২০১৯ সালের ৬ মে ২০ দল ছাড়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ।
ইভিএম বিরোধিতা দুই দলের
নির্বাচন কমিশন ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে সম্প্রতি সংলাপ করে। যাতে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশই নেয়নি।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ইভিএম মানেন না। ইভিএম এ নির্বাচনকে আওয়ামী লীগের নতুন ফাঁদ বলেই ব্যক্ত করছেন দলটির নেতারা।
জমিয়তের জোট ছাড়া অংশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ব্যালটে ভোট করার প্রস্তাব করেছি। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে ইভিএমের দোষক্রুটিগুলো তুলে ধরেছি।’
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে শুধু আমরা কেন অনেকেরই বিরুদ্ধে বলেছে। ইভিএম নিয়ে যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের কথা না। কথা ইভিএম পরিচালনা মানুষের বিরুদ্ধে। মানুষ নিরপেক্ষ না হলে ইভিএম নিখুঁত থাকবে না। যেহেতু এখানে রাজনীতি আছে, তাই এটাকে আমরা গ্রহণ করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘এখনই আমরা ইভিএমের সাপোর্ট করি না। তবে সব দল একমত হলে আমরা সমর্থন করব। এখনই সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দিয়ে দিলে সেটা নেহাতই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হবে।’