আবুল কাশেম। বাড়ি যশোর। ঢাকার আদাবরে একটি বাড়িতে নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বে রয়েছেন। ঈদ কেটেছে কর্মস্থলে।
নিউজবাংলাকে কাশেম বলেন, ‘গতবার (ঈদুল ফিতরে) বাড়ি গেছিলাম। বছরে একবার ঈদ করতে পারি। সব বার কি ফ্যামিলির সাথে ঈদ করা যাবে? তবে পরিবারের কথা মনে পড়ছে।’
কাশেমের দুই ছেলে ও স্ত্রী আছেন। বলেন, ‘ছেলেরা আমাকে ছাড়া ঈদ করতে মন খারাপ করে। কিন্তু গার্ডের চাকরি তো, দুইবার ছুটি দেয় না।’
ঈদ করতে শহর থেকে এলাকামুখী যে ঢল, তাতে কারও কারও যোগ দেয়ার সুযোগ নেই। জরুরি সেবায় যারা নিয়োজিত, তাদের পক্ষে কেউ দুই ঈদের একটিতে, কারও আবার কোনো ঈদেই ছুটি মেলে না।
কারও পক্ষে আবার আসা-যাওয়ার খরচ বহন করা সম্ভব হয় না। সফুরা খাতুন তাদেরই একজন। বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুরে। থাকেন আদাবর ১৬ নম্বর বস্তিতে। ঢাকায় হাত পেতে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তার ছেলে ক্যানসারে আক্রান্ত। তার কথা বলেই মানুষের কাছে সাহায্য চান। কিন্তু মানুষ এখন আগের মতো সাহায্যও করে না। সফুরা বলেন, ‘টাকার অভাবে বাড়ি যাইতে পারি নাই। টাকা কই পামু?’
আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, কর্মস্থলে ঈদ বুঝি খারাপ কাটে। আসলে তা নয়। যারা বাড়ি থেকে দূরে ঈদ করেন, তারা বলছেন, সহকর্মীদের মধ্যে ঈদের কারণে হৃদ্যতা বাড়ে।
অফিসেই সালামি দেয়া নিয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাস চলে। সহকর্মীদের কেউ কেউ নিয়ে আসেন সন্তানদেরও। ঘর থেকে খাবার নিয়ে আসেন কেউ কেউ। কাজের ফাঁকে ফাঁকে হাসি আনন্দে কেটে যায় দিন।
যারা একা ডিউটি করেন, তারা বলছেন, এই দিনে যারা সেবা নিতে আসেন, তাদের সঙ্গে ভাব বিনিময় হয়, বছরের অন্য সময়গুলোতে যা সাধারণত হয়ে ওঠে না।
সংবাদকর্মী নিশাত বিজয়ের বাড়ি যশোরে। কাজ করেন অনলাইন গণমাধ্যম বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট হিসেবে। তিনি দুই ঈদের একটিতেও ছুটি পাননি। ফলে দিনটি কেটেছে ঢাকাতেই।
বিজয় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ৭টায় বায়তুল মোকাররমে প্রথম ঈদ জামাতের অ্যাসাইনমেন্ট ছিল। সবাইকে এ সংবাদ জানানোটাই ঈদ আনন্দ ছিল, তারপর সহকর্মীরা মিলে আড্ডা দিলাম। কিন্তু পরিবার থেকে দূরে থাকাটাও কষ্টের। সাংবাদিক জীবন এসব কষ্ট আর টুকরো আনন্দের মিশ্রণ।’
আদাবর থানায় কর্মরত এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, কাজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম খারাপ লাগত। এখন বরং ভালোই লাগে।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের চাকরি করি। এটা তো মেনে নিতেই হবে। পাঁচ বছর ধরে এভাবেই দায়িত্ব পালন করছি।
‘ঈদের দিন ঈদের নামাজে নিরাপত্তার ডিউটি ছিল। যদিও পরিবারের কথা মনে পড়েছিল। কিন্তু খারাপ লাগেনি।’
দানেশ আলীর বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী। তিনি ঢাকার শ্যামলীর একটি ব্যাংকের বুথে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন৷ তিনি বলেন, ‘দুই ঈদের যেকোনো একটাতে বাড়ি যেতে পারি। এবার ডিউটি পড়ছে।
‘বাড়ি যেতে না পেরে খারাপ লাগছে। বাড়িতে বাবা, মা ও ছোট বোন আছে। ঈদের পরে বাড়ি যাব।’ দিনটি কীভাবে কেটেছে?
দানেশ বলেন, ‘সকালে শ্যামলী মসজিদে নামাজ পড়ে ডিউটিতে এসেছি। রাত ১০টায় বাসায় যাব। এর মাঝে দুপুরে খাবার খেতে বাসায় গিয়েছি।’
ঈদে বুথে গ্রাহক কমই আসে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘ঈদ সময় তেমন কাস্টমার আসে না। তাই চুপ করে বসে থাকা ছাড়া তেমন কোনো কিছু করার থাকে না। কিন্তু কী আর করব, ডিউটিটাই এমন।’