কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়। বছরের পুরোটা সময় এই এলাকায় যানজটে নাকাল হয় নগরবাসী, রোববার ঈদের দিন সেই কান্দিরপাড় অনেকটা ফাঁকা।
যানজটহীন এলাকায় বসেছে মাংসের হাট। এই হাট বছরে বসে একবারই। কোরবানির পর যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস সংগ্রহ করেন, তারা এ হাটের বিক্রেতা। ক্রেতাও তারা, যারা দিতে পারেননি কোরবানি।
এই হাটে ওজন করে মাংস কেনাবেচা হয় না, হয় অনুমান করে। বিক্রেতার ব্যাগে যে পরিমাণ মাংস আছে তা আন্দাজ করে দরদাম করেন ক্রেতা।
আজমল হোসেন। দিনমজুরের কাজ করেন। থাকেন নগরীর ধর্মপুর এলাকায়। দুপুর ১২টায় তিনি একটি ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বেলা ৩টা পর্যন্ত ঘুরে সংগ্রহ করেছেন মাংস।
আজমল হোসেন বলেন, ‘প্রায় ১০ কেজি মাংস পাইছি। দুই-তিন কেজির মতো নিজের লাইগ্গা রাখছি। ৬/৭ কেজি মাংস বেচচি এক হাজার টেহায়। আমি গরিব মানুষ। ঘরে মা বউ দুই পোলা এক মাইয়া আছে। এই এক হাজার টাকায় তেল, পেইজ, মসুল্লা কিনমো। কিছু টেকা নিজের কাছে রাখমু। যে দুই তিন কেজি মাংস রাখছি ঘরে গিয়া বউরে কমু রাইন্ধা দিতো। পোলা মাইয়া লইয়া খামু।’ কথা বলতে বলতে বাড়ির পথে পা বাড়ান আজমল। তার চোখেমুখে তৃপ্তির আভা।
কান্দিরপাড়ে মাংস কিনতে এসেছেন সোহায়েব ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি একটি কাপড়ের দোকানে বিক্রয়কর্মী। কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই। ঘর ভাড়া, সন্তানের স্কুল ফি আর সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। ঘরে আমার মেয়ে ও স্ত্রী আছে। তাদের জন্য ৫/৬ কেজি মাংস কিনছি। ১২০০ টাকা নিয়েছে। একটু পরেই বাসায় যাব। এর মধ্যে দুবার ফোন করে মেয়ে জানতে চেয়েছে, বাবা তুমি কখন আসবে। মাংস কিনছি। ভালো লাগছে।’
কান্দিরপাড়ের হাটে শুধু নিম্ন আয়ের মানুষই মাংস কেনেন না। এখানে মাংস কিনতে ভিড় করেন খাবার হোটেলের মালিকরাও।
নগরীর শাসনগাছা এলাকার এক হোটেল মালিক জহিরুল হক। অন্তত ২০ কেজি মাংস কিনেছেন ৬ হাজার টাকায়। জহিরুল হক বলেন, ‘প্রতি বছরই কোরবানি ঈদের দিন আমি কান্দিরপাড় থেকে মাংস কিনি। ফ্রিজে রেখে দেই। পরে আস্তে আস্তে রান্না করে বিক্রি করি। ‘আমি ব্যবসায়ী মানুষ। দুই টাকা কমে মাংস কিনতেই কান্দিরপাড় আসি।’
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কান্দিরপাড়ে মাংস ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় বাড়তে থাকে। এখানে কেউ কারও পরিচিত না। মাংস কেনাবেচার পরেই বাড়ির পথে পা বাড়ান সবাই।