দেশে সারা বছর যে পরিমাণ পশু জবাই হয়, তার ৬০ শতাংশই হয় ঈদুল আজহায় কোরবানির মাধ্যমে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ঈদের নামাজের পরপরই পশু জবাইয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশে কোরবানিদাতার ত্যাগের সেই মহোৎসব পশু কোরবানি।
এরপর পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়িয়ে তা আলাদা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেশি এগিয়ে আছে ঢাকাসহ সারা দেশের শহরের কোরবানিদাতারা।
রাজধানীতে পশু কোরবানি শুরু হয় সকাল ৭টার পর থেকেই। সাধারণত শহরের পশু কোরবানির প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন পেশাদার কসাইরা। এ কারণে তাদের চামড়া ছাড়ানোর কাজটিও হয় দ্রুত। তাই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়াতেও থাকে যথারীতি এগিয়ে।
এদিকে ঈদের সকাল থেকেই সর্বত্র চলছে চামড়া সংগ্রহের তৎপরতা। এ সময়ে সংগ্রহ করা চামড়ার মাধ্যমেই টিকে আছে দেশের তৃতীয় বৃহৎ রপ্তানি খাত ট্যানারি ব্যবসা।
শুধু তা-ই নয়, ঈদের সময় দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানার সংগ্রহ করা চামড়া বিক্রি করে যা টাকা হয়, তার মাধ্যমে তাদের চার-পাঁচ মাসের খরচও উঠে আসে।
তাই প্রতি বছর ঢাকা শহরের অলিগলি ও প্রধান সড়ক এবং গ্রামে গ্রামে চামড়া সংগ্রহের কাজে এগিয়ে থাকে স্থানীয় মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। পরে তা বিক্রি হয় চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে। বেশির ভাগ চামড়া মূলত তাদের মাধ্যমেই ব্যবসায়ীদের কাছে যায়।
তবে চামড়া সংগ্রহের কাজে মৌসুমি ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম নয়। এর বাইরে কিছু কিছু ট্যানারি মালিকের পক্ষে নিয়োজিত ফড়িয়ারা বিভিন্ন স্থান থেকে সরাসরি কিছু চামড়া সংগ্রহ করে থাকে
কারণ প্রতি বছর সরকার লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য ৪৭ থেকে ৫২ এবং সারা দেশে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
এ ছাড়া খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা বর্গফুট নির্ধারিত আছে। মূলত কম দামে কাঁচা চামড়া কেনার উদ্দেশ্যেই ট্যানারি মালিকরা এই কাজটি করে থাকেন।
রোববার ঈদের দিন সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে চামড়ার স্তূপ। রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ, খিলগাঁও, মগবাজার, ইস্কাটন ও বাড্ডা এলাকায় স্থানীয় মাদ্রাসা কমিটির উদ্যোগে চামড়া সংগ্রহের কাজ চলছে।
মাদ্রাসার প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বিনা মূল্যে সংগ্রহ করছেন চামড়া। এক এলাকা থেকে কিছু চামড়া পেলে তা তোলা হচ্ছে রিকশা ভ্যানে। এরপর ছুটছেন তারা অন্যত্র।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সংগঠনের তথ্য মতে, গরুর আকৃতি ও ওজনভেদে চামড়ার পরিমাণ কমবেশি হয়। সাধারণত গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ২২ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ বর্গফুট পর্যন্ত হয়। আর ছাগল-খাসির চামড়ার গড়হার হচ্ছে সাড়ে ৪ বর্গফুট।
এ বছর কোরবানি থেকে চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা প্রায় ৯০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের আশা করছেন।