ঈদে বাড়ি ফিরতে মানুষের চরম ভোগান্তির মধ্যে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জেনেছেন, এবার ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। বলেছেন, এটি তার বক্তব্য নয়, মানুষের বক্তব্য।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উপহার বিতরণ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ার কারণে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে। এটি আমার কথা নয়, মানুষের বক্তব্য। অথচ অনলাইনে দেখলাম, বিএনপি নেতারা বক্তব্য রাখছেন মানুষের ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগ হচ্ছে।
‘আসলে মানুষ ভালো আছে বিধায় তাদের মনটা খারাপ। পবিত্র ঈদুল আযহা হচ্ছে ত্যাগের, এবং মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের শিক্ষা দেই ঈদ উৎসব। আমি আশা করব, ঈদকে সামনে রেখে তারা দেশে মিথ্যাচার এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার রাজনীতিটা বন্ধ করবেন।’
চলতি বছর ঈদুল ফিতরে বাড়ি ফেরা ছিল নির্বিঘ্ন। তবে এবারের পরিস্থিতি পুরো উল্টো।
উত্তরের পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পরিস্থিতি এবার দুঃসহ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে কাটিয়ে ক্লান্ত হয়েছে লাখো মানুষ। ঢাকা থেকে বগুড়ায় যেতে ৩৫ ঘণ্টায় লাগার ঘটনাও ঘটেছে।
পদ্মা সেতু হয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে নির্বিঘ্ট চলাচল করলেও এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতেই কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ ঈদযাত্রায় এই ভোগান্তির এক কারণ। চলতি বছর ঈদুল ফিতরে আনুমানিক ২০ লাখের মতো মানুষ মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরেছে। এবার সে সুযোগ না থাকায় সড়কের পাশাপাশি ট্রেনেও উপচে পড়া যাত্রী দেখা গেছে।
আবার ঈদুল ফিতরে ছুটি ছিল বেশি। ঈদের ছুটির আগে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি ও মে দিবসের ছুটি মিলিয়ে মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল আগেভাগেই। আবার তারও আগে পোশাক কারখানার ছুটি হয়েছিল ধারাবাহিকভাবে। কিন্তু এবার কোনো পরিকল্পনা ছিল না।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে দেশ যে এগিয়ে গেছে সেটা জাতি সংঘের মহাসচিব, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট, বিশ্বব্যাংকসহ সমগ্র পৃথিবী স্বীকার করে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি, তখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত ৪১ শতাংশ মানুষ। আজকে সেটা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। অতি দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। এটি সম্ভবপর হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষের দিকে নজর দিয়েছেন বলে।’
পদ্মা সেতু নিয়ে অভিনন্দন না জানানোয় বিএনপির সমালোচনা করেন হাছান। বলেন, ‘যে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু থেকে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল সেই পদ্মাসেতু হওয়াতে বিশ্বব্যাংকও অভিনন্দন জানিয়েছে, বিএনপি কিন্তু অভিনন্দন জানাতে পারে নাই।
‘পদ্মা সেতু হওয়াতে আজকে মানুষের মধ্যে কী উচ্ছ্বাস! অথচ বিএনপি বলছে হাজারটা পদ্মাসেতু হলেও নাকি কোন লাভ হবে না। এটি কোন সুস্থ মানুষের বক্তব্য হতে পারে না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্য হচ্ছে রোড আইল্যান্ডের ওপরে দাঁড়িয়ে যেসব পাগলরা বক্তৃতা করেন ঠিক সে রকম বক্তব্য।’
ভোটার তালিকায় ট্রান্সজেন্ডারদেরকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। বলেন, ‘এই দেশে অনেকেই ক্ষমতায় ছিল, কেউ কিন্তু পাসপোর্টে কিংবা সরকারি ফর্মে তৃতীয় লিঙ্গ লেখার সুযোগ করে দেই নাই। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরেই তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি এসেছে। এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মা হচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
‘বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের সব জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশ্বাস করে। গত সাড়ে ১৩ বছর সময়ের মধ্যে অবহেলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির যে উন্নয়ন হয়েছে সেটি বাংলাদেশে আগে কখনও হয়নি। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেও এভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা ভেবে উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়নি।’
জেলা প্রশাসন কার্যালয় প্রাঙ্গনে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার সরওয়ার কামাল, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সহসভাপতি এম এ মোরশেদ হোসেন ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি ফাল্গুনি হিজড়া।