দেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে বাংলাদেশ।
জাপানের দীর্ঘ সময়ের এই প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে ‘বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু’ আখ্যা দিয়ে শনিবার দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি অফিস, ভবনে অর্ধনমিত রাখা হয়েছে জাতীয় পতাকা।
দেশ এখন ঈদের আমেজে। শুরু হয়ে গেছে ছুটি। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে মানুষ বাড়িমুখী। সেই সঙ্গে শনিবার নিয়মিত সাপ্তাহিক ছুটি। এরপরও আততায়ীর গুলিতে নিহত শিনজো আবেকে সম্মান জানাতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ শুক্রবার রাতে এক প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে শোক ঘোষণার কথা জানায়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. সামসুল আরেফিনের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘শনিবার বাংলাদেশের সকল সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।’
রাষ্ট্রীয় নির্দেশে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় এদিন বিশেষ প্রার্থনারও আয়োজন করা হয়।
শিনজো আবের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান রাষ্ট্রপতি। আবের মৃত্যু শুধু জাপানের নয়, পুরো বিশ্বের জন্য ক্ষতি বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিওকে লেখা এক চিঠিতে বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও নিজের পক্ষে শোক জানান প্রধানমন্ত্রী।
চিঠিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ক্রান্তিলগ্নে, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি নতুন অংশীদারত্বে উন্নীত করার ক্ষেত্রে নিজের মেয়াদকালে প্রয়াত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অপরিসীম অবদানের কথা আমরা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
শিনজো আবের চিন্তাচেতনা, দূরদর্শিতা এবং প্রজ্ঞার কারণে এটি শুধু জাপানের নয়, বরং গোটা বিশ্বের ক্ষতি বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অপ্রত্যাশিত দুঃসময়ে জাপানের শোকরত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাংলাদেশের জনগণও আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছে।’
জাপানের শোকাহত বন্ধুত্বপ্রতিম জনগণ এবং শিনজো আবের পরিবারের সদস্যদের সাহস ও দৃঢ়তায় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করার কথাও জানান শেখ হাসিনা।
রোববার অনুষ্ঠেয় জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অফ কাউন্সিলরসের নির্বাচন সামনে রেখে দেশটিতে চলছে প্রচার। সে প্রচারের অংশ হিসেবে শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইয়ামাতো সাইদাইজি স্টেশনের সামনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আবে। সে সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।
ঘটনার পরপর অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। তার বুক থেকে রক্ত ঝরছিল। হাসপাতালে মারা যান জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
৬৭ বছর বয়সী আবে দীর্ঘ সময় ধরে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
এ ঘটনায় একজন সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলাকারীর নাম তেতসুয়া ইয়ামাগামি।
ঘটনার তদন্তকারীদের কাছে ইয়ামাগামি জানিয়েছেন, আবের প্রতি তার ক্ষোভ ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল তার। এ জন্য হাতে তৈরি বন্দুক নিয়ে আবেকে গুলি করেন।
জাপান মেরিটাইম সেলফ ডিফেন্স ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা ৪১ বছর বয়সী তেতসুয়া ইয়ামাগামি। তিনি ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিন বছর ওই পদে ছিলেন।