বাড়িতে ঈদের গরু কেনা হয়েছে। প্রথমবারের মত বাবা হয়েছেন রাসেল। একদিকে ঈদ, অন্যদিকে প্রথমবারের মত বাবা হওয়ার আনন্দ। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেবে, মেয়েকে নিয়ে প্রথম ঈদ করা হবে। বাবা হিসেবে এই প্রথম ঈদ। সন্তানের নাম রাখা হয়নি। বাড়িতে গিয়ে রাখা হবে নাম। সব মিলিয়ে কত আয়োজন মনজুড়ে। রাসেলের যেন আর তর সইছিল না।
এদিকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে বাবার জন্য অপেক্ষা করছে সদ্যোজাত সন্তান।
শনিবার সকাল ১০টায় প্রতিবেশী তাফসির ও শরিফকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন রাসেল। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এই সড়ক ধরে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই ইলিয়টগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল।
বেকিনগর জিংলাতলী সড়ক থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের উঠতেই পেছন থেকে দ্রুতগামী আল বারাকা পরিবহনের একটি বাস রাসেলের মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনই ঘটনাস্থলে মারা যান। স্থানীয়রা তাদের দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রাসেলের মামা মনির হোসেন জানান, তার ভাগিনা রাসেল স্থানীয় একটি পত্রিকার দাউদকান্দি উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। বছরখানেক আগে চান্দিনা উপজেলার রানীপুরের মাহমুদা আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। তিনদিন আগে ইলিয়টগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে তাদের কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
মনির বলেন, ‘সকালে স্ত্রী সন্তানকে হাসপাতাল থেকে আনতে গিয়েই রাসেল বাস চাপায় মারা যায়। তার বাবা-মা ও স্ত্রীকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দিতে পারছি না।’
কেঁদে কেঁদে রাসেলের স্ত্রী মাহমুদা বলেন, ‘আমার স্বামী ফোনে বলেছিল বাড়িতে সবকিছু কিনে আনছি। আর কী কী লাগবে?
‘আমি বলছি, আর কিচ্ছু লাগবে না। আমাকে বলছে, তোমরা রেডি হও আমি আসছি। এই কথা বলার এক ঘণ্টা পর শুনি আমার স্বামী আর নেই। বাস চাপায় মারা গেছে। আমার মেয়েটা এতিম হয়ে গেল, আমিও বিধবা হয়ে গেলাম।’
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম জানান, জিংলাতলী-বেকিনগর সড়ক থেকে একটি মোটরসাইকেল মহাসড়কে উঠলে ঢাকামুখী বাসটি ওই মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এ সময় বাসটি সড়কের পাশে উল্টে যায়। এতে কয়েকজন যাত্রীও আহত হন।’
ওসি বলেন, ‘আমরা এই বাসটিকে থানায় নিয়ে এসেছি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’