বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় জনস্রোতে: রেলওয়ে

  •    
  • ৯ জুলাই, ২০২২ ১৩:৩০

স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু যাত্রীর চাপের কারণেই এবার ট্রেনের এমন শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।’

যাত্রীদের প্রায় ১২ ঘণ্টা অপেক্ষায় রাখার পর শনিবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন। পরে ট্রেনটি ১০টা ৫০ মিনিটে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায়। সাধারণ সময়ের চেয়ে অন্তত ১২ ঘণ্টা পর কমলাপুর ছাড়ে ট্রেনটি।

এ ছাড়া নীলসাগর এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের শিডিউলেও রয়েছে বড় ধরনের বিপর্যয়।

এমন শিডিউল বিপর্যয়ের মূলে জনস্রোতকে কারণ বলে দায়ী করছে কমলাপুর রেলস্টেশনের কর্তৃপক্ষ।

তাদের দাবি, জনস্রোতের কারণেই এবার ট্রেনের এমন শিডিউল বিপর্যয়।

কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু যাত্রীর চাপের কারণেই এবার ট্রেনের এমন শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।’

তিনি এমন দাবি করলেও ট্রেনে জনস্রোত এবার নতুন নয়। গত ঈদুল ফিতরেও ট্রেনে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেছে। সেবারও শিডিউলে কিছুটা সমস্যা হলেও সেটি সামলে নিয়েছিল রেল।

গত ঈদেও ছিল জনস্রোত, তারপরও ট্রেনের শিডিউল এমন ১২ ঘণ্টা বা তার আশপাশেও ছিল না। কিছু ট্রেন এক থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে ছাড়লেও সেটি খুব শিগগিরই কাটিয়ে উঠেছিল রেল, যা এবার চরম আকার ধারণ করেছে।

পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটির ১২ ঘণ্টা দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘এ ট্রেনটির দেরি হওয়ার কারণ হলো, যাত্রীসাধারণের জনস্রোত। তারা যে এভাবে হুড়মুড়িয়ে ট্রেনে উঠে পড়বে সেটা আমাদের কল্পনার অতীত ছিল। আমাদের রেলের নিরাপত্তা বাহিনী অনেক চেষ্টা করেও তাদের প্রতিরোধ করতে পারেনি।

‘এত বিপুল পরিমাণ যাত্রী নিয়ে যাত্রা করে ট্রেনটির বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে পাঁচটি বগির স্প্রিং বসে যায়। পরে যাত্রীদের নামাতে ৫ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।’

পঞ্চগড়, দ্রুতযান ও নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন তিনটি ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করছে বলেও এ সময় জানান তিনি।

মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘যেহেতু এখন ট্রেনে যাত্রীভর্তি, তাই সেগুলো আমাদের নির্ধারিত গতির চেয়ে অনেক নিয়ন্ত্রিত গতিতে চালাতে হচ্ছে, যাতে কোনো ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে না পড়ে। এ ছাড়া পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের পাঁচটি বগি বসে যাওয়ার কারণে আমাদের এবার ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।’

৩০ মিনিটে সিদ্ধান্ত বদল

শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে দুইবার করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে শিডিউল বিপর্যয়ে শনিবারে রাতের পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটির যাত্রা বাতিলের কথা জানায় রেল কর্তৃপক্ষ।

শনিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে নিজ কার্যালয়ে ট্রেন দুটির যাত্রা বাতিল বলে জানান কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার।

তার আধা ঘণ্টা পরেই তিনি আবার বলেন, ‘কোনো ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হচ্ছে না।’

এরপরই সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে যায় শুক্রবার রাতের পঞ্চগড় এক্সপ্রেস।

ট্রেনে উঠতে ‘যুদ্ধ'

প্রায় ১২ ঘণ্টা বিলম্বে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন কমলাপুর স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ায়। তারপর আধা ঘণ্টা ট্রেনটিতে উঠতে যাত্রীরা যা করলেন তা এক প্রকার যুদ্ধের নামান্তর। ট্রেনটি আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হামলে পড়েন ট্রেনে উঠতে। ২০ মিনিটের মধ্যে ট্রেনের ভেতরে কিংবা ছাদে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। ছাদ থেকে যাত্রী নামাতে রেলওয়ে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়।

অবশ্য সব যাত্রী নামাতেও পারেনি কর্তৃপক্ষ। কিছু যাত্রীকে নামিয়ে ছাদে পানি ঢেলে দেয়, অনেককে নামাতে মারমুখী ভঙ্গি করেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে কিছুতেই কিছু হয় না, সবাইকে নামানোও সম্ভব হয়নি।

রেলস্টেশনের দায়িত্বরত রেলওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি তাদের ছাদ থেকে নিচে নামাতে। এ জন্য সব ধরনের চেষ্টাই অব্যাহত আছে।’

তিনি বলেন, ‘আসলে যারা মনে করে যে ভেতরে চাপাচাপিতে গরম লাগবে, তারাই ছাদে যায়। এটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু তারপরও অনেকেই যাচ্ছেন।’

ট্রেনের ছাদে ওঠা এক যাত্রীর অভিযোগ, যারা ট্রেনের ছাদে উঠেছেন তারা কেউ টিকিট কাটেননি।

কমলাপুর রেলস্টেশনে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে কয়েকটি বগির স্প্রিং দেবে গিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য শনিবার ট্রেনটি ছাড়ার আগে যাত্রীদের ছাদ থেকে নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।’

চারবার সময় পরিবর্তন

কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়ার আগে চারবার সময় পরিবর্তন করে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন। গতকাল রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল ট্রেনটি। কিন্তু ট্রেনটি ঠিক সময়ে স্টেশনে আসেনি। এরপর সময় দেয়া হয় রাত ৩টায়। তাও আসেনি।

পরে ভোর ৫টায় ও সকাল ৯টায় সময় দেয়া হয়। সবশেষ সকাল ১০টা ১৫ মিনিট ট্রেনটির সময় দেয়া হলেও আসেনি। সেই ট্রেন আসে সকাল ১০টায়। ছেড়ে যায় ১০টা ৫০ মিনিটে।

বিলম্বে আরও যত ট্রেন

পঞ্চগড়ের মতো নীলসাগর এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেসসহ উত্তরবঙ্গগামী অন্য ট্রেনগুলোও যেন সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি দিতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে। সেটা সকাল সাড়ে ১০টায়, ১১টা ২০ মিনিটে এবং সর্বশেষ ১১টা ৩৫ মিনিটে ছেড়ে যেতে পেরেছে।

দুই ঘণ্টা বিলম্বে সকালে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা ছিল ভোর ৬টায়, সেটি স্টেশন ছাড়ে সকাল ৮টায়।

দিনাজপুরগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস গতকাল রাত ৮টায় ছাড়ার কথা। সেটি স্টেশনে এসেছে আজ ভোর ৬টায়। স্টেশন ছেড়ে যায় ৭টায়।

এ বিভাগের আরো খবর