চলতি ঈদে মোটরসাইকেল বন্ধ থাকায় ঈদযাত্রায় যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাস না পেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়ায় বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন ঘরমুখো যাত্রীরা।
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে শনিবার এমন চিত্র দেখা যায়। সেখানে বাসের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যে-যেভাবে পারছেন যাত্রীদের পকেট কাটছেন।
বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে পুলিশের কন্ট্রোল রুম থাকলেও ভাড়ার নৈরাজ্য ঠেকাতে তাদের ভূমিকা চোখে পড়েনি। বরং কন্ট্রোল রুমের পাশের রাস্তাতে প্রকাশ্যেই এভাবে দুই-তিন গুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
রাজশাহীগামী শ্রাবন্তী শিশির স্পেশাল পরিবহনের যাত্রী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অন্য সময় ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায় রাজশাহী যাই। আমাদের থেকে এখন সেই ভাড়া দেড় হাজার টাকা নিয়েছে।’
একই পরিবহনের আরেক যাত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার কাছ থেকেও ১ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে।’
যাত্রী সেজে ভাড়া জানতে চাইলে শ্রাবন্তী শিশির স্পেশাল পরিবহনের সুপারভাইজার জাকির হোসেন বলেন, ‘রাজশাহী এক দাম এক হাজার টাকা।’
তাহলে ভেতরের যাত্রীদের কাছ থেকে কেন দেড় হাজার টাকা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে জাকির বলেন, ‘ভাই ভেতরের যাত্রীদের কথা আলাদা। কল্যাণপুর কাউন্টার থেকে তারা টিকিট কাটছে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে। ওই কাউন্টারগুলো থেকে এসে আমাদের বলছে ভাই আমার এই কয়েকটা যাত্রী আছে। নিয়ে যান।’
কোনো কাউন্টার থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে তাদের গাড়িতে যাত্রী তুলে দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে চাননি।
বাড়তি ভাড়া নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসার সময় গাড়ি খালি আসে। আট-নয় ঘণ্টা জ্যাম ঠেলে গাড়িটা আসে। এ ছাড়া ঈদের বাজারে এমনিতেই দুই-এক শ টাকা বেশি নেয়। যে কারণে ভাড়া বেশি। অন্য সময় আমরা দুই-তিন শ টাকাতেও যাত্রী নিই।’
একইভাবে যাত্রী সেজে তন্ময় ট্রাভেলসের সুপারভাইজার মো. সাগর বলেন, ‘রাজশাহী এক হাজার টাকা ভাড়া। গাড়ি জ্যামের কারণে অনেক লেট করে ঢুকতেছে। কত তেল খরচ হইছে এটাও তো দেখতে হবে। দুই ট্রিপের জায়গায় এক ট্রিপ দিচ্ছি।’
নিউ ভিলেজ লাইন পরিবহনের দুপুরিয়ার যাত্রী সেন্টু মিয়া বলেন, ‘এমনি সময় ভাড়া নেয় দেড় শ। এখন নিচ্ছে চার শ। এক টাকাও কম নিচ্ছে না, তাই দাঁড়াইয়া আছি।’
বেশি ভাড়া নেয়ার কারণ জানতে চাইলে নিউ ভিলেজ লাইন পরিবহনের সুপারভাইজার রবিন বলেন, ‘সকালে ৫০০ করে গেছে। এখন ৪০০ টাকা। জ্যামের কারণে ভাড়া বেশি।’
আসিম পরিবহনের সুপারভাইজার রিয়াজ বলেন, ‘রাজশাহী এক হাজার। লাইনের গাড়িতে তো সমস্যা নাই। আর আমাদের পদে পদে পুলিশে ডিস্টার্ব, পদে পদে চাঁদা দিতে হয়। ভাড়া তো বেশি হবেই।’
রাজধানী লোকাল পরিবহন যাচ্ছে আরিচা ঘাট। দেড় শ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ৩০০ টাকা।
এই গাড়ির সুপারভাইজার মো. সাদেক বলেন, ‘যাওয়ার সময় যাত্রী ভরে নিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আসার সময় তো খালি আসতে হয়। আমরা তো কমই নিচ্ছি। সেলফি পরিবহন তো পাঁচ শ করে নিচ্ছে।’