বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সদরঘাটে ভিড়ের মধ্যেও হতাশা

  •    
  • ৮ জুলাই, ২০২২ ২২:০১

সাধারণ চোখে ভিড় দেখা গেলেও বছরের এই সময়টায় গাটে আরও বেশি মানুষ থাকে জানিয়ে হতাশার কথা বললেন ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি মানামির ইনচার্জ মো. সোহেল। তিনি বলেন, ‘পোশাক কারখানা ছুটি হয়েছে, যাত্রীর চাপ তো হবেই। তবে ঈদযাত্রার পূর্বের সেই আমেজটা আর নাই।’

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণের পথে লঞ্চগুলোতে যে হাহাকার দেখা দিয়েছিল, সেটি বজায় ছিল ঈদযাত্রা শুরুর দিনের বিকেল পর্যন্ত। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নামতেই ঢাকার নৌবন্দর সদরঘাট হয়ে যায় লোকে লোকারণ্য। হাসি ফেরে লঞ্চকর্মীদের মুখে।

শুক্রবার দিনভর এই ভিড় ছিল লঞ্চ টার্মিনালে। ঈদের আগে আগে লঞ্চের কোনো টাইম টেবিল নেই। একেকটা নৌযান টার্মিনালে ভিড়ছে আর হুড়মুড়িয়ে যাত্রী উঠছে তাতে।

লঞ্চগুলো আসছে খালি আর যাচ্ছে উপচে পড়া যাত্রী নিয়ে, যে কারণে তেল পুড়িয়ে যাত্রীহীন নৌযানগুলোর ঢাকায় আসার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেরেছেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা।

টার্মিনালে এই ভিড়ের বিষয়টি টের পাওয়া যায় গুলিস্তান থেকেই। সরদঘাটগামী ঘোড়ার গাড়ি, রিকশা আর বাসগুলো ভরে যাচ্ছে মুহূর্তেই। তারপরও বিপুল সংখ্যক মানুষকে হেঁটে রওয়ানা হতে দেখা যায়।

যাত্রীরা যে গাড়িতেই চাপুক না কেন, তারা যেতে পেরেছে কেবল ইংলিশ রোড পর্যন্ত। বাকি পথ হাতে জিনিসপত্র নিয়েই চলতে হয়েছে হাজারো মানুষকে।

দিনভরের ভিড় সন্ধ্যায় বাড়ে আরও। টার্মিনালে যেন তিল ধরার ঠাঁই নেই। এর মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করে আসতে থাকে হাজারো মানুষ। এ যেন গায়ের জোরের লড়াই।

এত মানুষের ধারণ করার মতো পর্যাপ্ত কেবিন নেই কোনো লঞ্চে। যাত্রীদের ঠাঁই হয় তাই ডেকে। সেখানে সুবিধা মতো চাদর পেতে কেউ শুয়ে, কেউ বসে থাকেন দল বেঁধে।

কর্ণফুলী-১২ লঞ্চের সুপারভাইজার মামুন আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেকে ভেবেছিল পদ্মা সেতু হওয়াতে লঞ্চগুলোতে যাত্রী সংকট দেখা দেবে, কিন্তু গতকাল থেকে পরিস্থিতি ভালো।’

সুন্দরবন-৭ লঞ্চের স্টাফ আবু হাসান নিউজবাংলাকে জানান, ‘বিকেল পাঁচটার আগেই সিঙ্গেল-ডাবল সব কেবিন বুকিং হয়ে গেছে। ডেকেও যাত্রী প্রায় পরিপূর্ণ।’

গত ২৬ জুন থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর পর থেকে বরিশাল অঞ্চলের লঞ্চগুলো এক কথায় যাত্রী শূন্য হয়ে যায়। যাত্রীদের আকৃষ্ট করে ভাড়া ৩০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি কমিয়ে দেয় বিভিন্ন লঞ্চ। কিন্তু তাদেও যাত্রীর দেখা মিলছিল না সেভাবে। এতে একেবারে হতাশ হয়ে যায় লঞ্চের কর্মীরা।

সে সময় তাদের আশা ছিল, যাত্রী ফিরবে ঈদে। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত যাত্রীর দেখা মিলছিল না। বিকেল থেকে কিছু কিছু যাত্রী আসতে শুরু করে আর সন্ধ্যা ও রাতের লঞ্চগুলোতে দেখা যায় ব্যাপক ভিড়।

কর্ণফুলী-১২ লঞ্চের সুপারভাইজার মামুন আলী বলেন, ‘নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলো লঞ্চে বাড়ি যাচ্ছে বেশি। সড়ক পথের চেয়ে তুলনামূলক ভাড়া কম ও যাত্রাপথ আরামদায়ক হওয়াতেই যাত্রীদের এমন চাপ।’

এমভি তাসরিভ-২ এর ম্যানেজার আরশাদ শেখ জানান, ‘গতকাল থেকে লঞ্চে যাত্রীর ভিড় বাড়ছে। আশা করি ঈদের আগের দিন পযন্ত এরকম অবস্থা থাকবে।’

তবে সাধারণ চোখে ভিড় দেখা গেলেও বছরের এই সময়টায় গাটে আরও বেশি মানুষ থাকে জানিয়ে হতাশার কথা বললেন ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি মানামির ইনচার্জ মো. সোহেল। তিনি বলেন, ‘পোশাক কারখানা ছুটি হয়েছে, যাত্রীর চাপ তো হবেই। তবে ঈদযাত্রার পূর্বের সেই আমেজটা আর নাই।’

যে যাত্রীরা সদরঘাটে এসে নৌপথে বাড়ি যাচ্ছেন, তাদের একাংশ আবার বাধ্য হয়ে এসেছেন। এই যেমন রাজধানীর শ্যামলীর বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইচ্ছে ছিল পদ্মা সেতু দিয়ে এবার বাড়ি যাব। কিন্তু টিকেট পাইনি। তাই প্রতিবারের মতো লঞ্চে যাচ্ছি।’

উত্তরার বাসিন্দা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘পরিবার নিয়ে যাচ্ছি। তাই লঞ্চ যাত্রাই আরামদায়ক।’

বরিশাল অঞ্চলের মধ্যে পদ্মা সেতু কেবল প্রভাব ফেলেনি ভোলার লঞ্চগুলোতে। এই পথে যাত্রী কমেনি বলে জানিয়েছেন জেলার চরফ্যাশনগামী লঞ্চ তাসরিফ ৩-৪ ও মনপুরাগামী লঞ্চ তাসরিফ ১-২ এর ম্যানেজার জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভোলাগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রী কমেনি। বরং ঈদ উপলক্ষে আগের চেয়ে চাপ বেড়েছে।’

বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মো. শহীদ উল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ সকালে ৪৬টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আরও ৮০টি লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। ভিড় থাকলেও যাত্রীদের জন্য লঞ্চ সংকট হবে না।’

সদরঘাটের ঢাকা মহানগর পুলিশ- ডিএমপির নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই মোখলেসুর রহমান বাবু বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতি গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর