সারা দেশে প্রায় ৬ লাখ মাংস ব্যবসায়ী রয়েছেন। এসব দোকানে কসাই বা মাংস শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন ১৫ লাখ মানুষ। এর বিপরীতে সারা দেশে এবার পশু কোরবানি হতে পারে প্রায় ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার ২৩৫টি।
দেশে পেশাদার কসাই বা মাংস শ্রমিকের তীব্র ঘাটতি দেখা দেয় কোরবানির তিন দিন। ঈদের দিন একজন কসাই পাওয়া প্রায় দুষ্কর। আর এ কারণে কসাইয়ের পেছনে বিপুল পারিশ্রমিক দিতে হয়। সেটা কতটা বেশি?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ কোরবানিদাতা ঈদের আগেই যার যার পছন্দ অনুযায়ী কসাই ঠিক করে ফেলেন। সবাই চান ঈদের নামাজের পরপর কোরবানি সেরে ফেলতে। তাই কসাইয়ের চাহিদা সকালের সময়টায় বেশিই থাকে। ফলে সময়ভেদে তাদের পারিশ্রমিক হয় ভিন্ন ভিন্ন।
তবে বিগত কয়েক বছরের প্রবণতা বলছে, কোরবানির দিন রাজধানীতে কসাইদের পারিশ্রমিক নির্ধারণের একটা অঘোষিত মানদণ্ড ইতোমধ্যে নির্ধারণ হয়ে গেছে। পশুর দামের ওপর নির্ভর করে কসাইয়ের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়। আর এ ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে পারিশ্রমিকের হার হলো পশুর দামের প্রতি হাজারে ২০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে পশুর দাম যত বেশি হবে বা পশু যত বড় হবে, কসাইদের পারিশ্রমিক তত বেশি হবে।
কোনো পশুর দাম যদি ৫ লাখ টাকা হয়, তাহলে কসাইয়ের মজুরি নির্ধারিত হবে ১ লাখ টাকা। এ কারণে ঈদের দিন সাধারণত কসাইরা বড় পশুতেই বেশি আগ্রহ দেখান।
পশুর দাম অনুযায়ী কেউ শতকরা ১৫ টাকা হারে, কেউ আবার পশুর দামের পাঁচ ভাগের এক ভাগ হারে মজুরি দাবি করেন। এ টাকায় একজন কসাই গরু জবাই থেকে শুরু করে চামড়া ছাড়ানো, হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে সঠিক সাইজে প্রস্তুত করা, হাড়গুলো ছোট ছোট করে কেটে দেয়া, নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কার করাসহ একেবারে সব কাজ করে দেন। তিন থেকে চার মণ মাংস হবে এমন একটি গরু জবাইয়ের কাজ পেশাদার ও প্রশিক্ষিত দুইজন কসাই এক ঘণ্টায় শেষ করতে পারেন।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, ঢাকায় মাংস শ্রমিকের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি নয়। এদের মধ্যে প্রশিক্ষিত কসাইয়ের সংখ্যা মাত্র ১১ হাজার ৬০০-এর মতো।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শুধু ঢাকায়ই কোরবানি হবে ২৪ লাখ ৭ হাজার ১৯৬টি পশু। এর বাইরে চট্টগ্রামে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৯০৪টি এবং রাজশাহীতে প্রায় ২০ লাখ পশু কোরবানি হওয়ার অপেক্ষায়।
চাহিদা বেশি থাকায় কসাইদের পক্ষে সবার মন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ সুযোগে প্রতি বছর কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে আগমন ঘটে অনেক অপেশাদার বা মৌসুমি কসাইদের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব মো. রবিউল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, সাধারণত মাংস শ্রমিকদের পারিশ্রমিক নির্ভর করে কখন পশু জবাই হবে তার ওপর। সকাল থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত একরকম থাকে। এর পর বেলা যত বাড়বে ততই কমবে তাদের মজুরি।
পশুর দামের পাঁচ ভাগের এক ভাগ কসাইয়ের মজুরি কেন দিতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমিতির সদস্যদের মধ্যে যারা বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশুর মাংস প্রস্তুতকরণ কাজে যুক্ত থাকেন, তারা গরুর সাইজ বুঝে ৮ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। এর বেশি তারা নেন না।
রবিউল আলম বলেন, কোরবানি বেশি হওয়ায় এবং চাহিদার তুলনায় মাংস শ্রমিক কম থাকার সুযোগ নিয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির বাইরেও বিচ্ছিন্নভাবে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে খামারিরা তাদের মতো করে মাংস শ্রমিক তৈরি করছেন। মূলত তারাই এই অযৌক্তিক পারিশ্রমিক দাবি করে থাকেন। অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে অর্ডার নিয়ে কসাই সাপ্লাই দেন। কেউ আবার অনলাইনে পশু কিনে তাদের প্রতিষ্ঠানের কসাই দিয়েই মাংস প্রস্তুত করে আনেন।
রামপুরা কাঁচাবাজারের মাংস বিক্রেতা লোকমান বলেন, ‘একেক জন একেক দাম নেন। কেউ নেন পশুর সাইজ দেখে, কেউ আবার দাম। তবে আমরা কোনো দাম দেখি না। সাইজ দেখে একটা চুক্তিতে যাই, সেটি যত বড়ই হোক, কোনোভাবেই ২০ হাজার টাকার বেশি পারিশ্রমিক দাবি করি না। শুধু আমি নই, আমার জানা মতে, পরিচিত আরও যারা রয়েছেন কেউই এর বেশি নেন না। সাধারণত রেটটা ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যেই বেশি থাকে।’
অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির একটি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল মিট। তারা সাধারণত নিজেদের বিক্রি হওয়া পশু ছাড়া বাইরের পশুর মাংস প্রক্রিয়াজাত করে না। প্রতিষ্ঠানটিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের দিন তারা কোনো কোরবানির মাংস সরবরাহ দিতে পারছে না। ঈদের পরদিন প্রক্রিয়াজাত করার পারিশ্রমিক ২৩ হাজার টাকা, তৃতীয় দিনে ১৮ হাজার টাকা এবং চতুর্থ দিন ১৩ হাজার টাকা।
সামারাই ক্যাটেল ফার্ম অনলাইনে গরু বিক্রির পাশাপাশি কেউ চাইলে মাংস প্রক্রিয়াজাত করার কসাই বা মাংস শ্রমিকও সরবরাহ করে। এই ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক মো. শাহেদ জানান, তারা প্রতি হাজারে নিচ্ছেন ২০০ টাকা হারে।