বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জাজিরা ভাঙছে পদ্মায়, দিশেহারা মানুষ

  •    
  • ৮ জুলাই, ২০২২ ১৭:৪০

‘ওইখানে আমার সব আছিল। জায়গাজমি সব গিল্লা খাইছে পদ্মায়। অহন আমার আর কিছুই নাই। কই যাইয়া থাকমু হেই জায়গাডাও কেউ দিতাছে না।‘

বর্ষার শুরুতেই ভাঙনের কবলে পড়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মা পাড়ের বিস্তীর্ণ জনপদ। নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙন অব্যাহত থাকায় বসতভিটা নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন মানুষ। দুর্গত এলাকায় শ্রমিক সংকটে ভাঙনের কবলে থাকা বাড়িঘর সরিয়ে নিতে পারছেন না অনেকে।

ভাঙনের কবলে পরে পদ্মায় বিলীন হয়েছে নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া আহমদ মাঝিরকান্দি, মোল্লাকান্দি, বেপারীকান্দি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা। ভাঙনের কারণে বসতি সরিয়ে নিয়েছে এসব এলাকার অন্তত ৩০টি পরিবার।

ভাঙন দেখা দিয়েছে বড়কান্দি ইউনিয়নের রঞ্জন ছৈয়ালকান্দি, সরদারকান্দি, খলিফাকান্দি, মীরআলীকান্দি, পাথালিয়াকান্দি গ্রামের পদ্মার তীরবর্তী এলাকাতেও। এসব এলাকার অন্তত অর্ধশত পরিবার নদীতে তাদের বসতি হারিয়েছে। এখনও ভাঙন আতঙ্কে বসতি সরিয়ে নিচ্ছে অনেক পরিবার।

জজিরার নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরের ট্রলার ঘাটে নোঙর করা আছে ১০ থেকে ১২টি ইঞ্জিনচালিত নৌযান। এগুলোতে তোলা হচ্ছে মানুষের বসতবাড়ি, গরু-ছাগল।

অনেকে আবার নদীর তীর থেকে বাড়িঘর ভেঙে সরিয়ে এনে আশপাশের ফাঁকা জমিতে সারিবদ্ধভাবে রেখে দিচ্ছেন। দুর্গত এলাকায় শ্রমিক সংকটও রয়েছে।

পাইনপাড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে খানিকটা এগিয়ে আহমদ মাঝিরকান্দি গ্রাম পর্যন্ত হেটে যেতে চোখে পড়ল নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধরাও ব্যস্ত নিজেদের শেষ সম্বলটুকু রক্ষার কাজে।

অনেক পরিবার নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে খোলা আকাশের নিচে মাচা পেতে আশ্রয় নিয়েছে। নাওয়া-খাওয়া সবই চলছে সেই উন্মুক্ত স্থানে।

গ্রামের ভেতর থেকে খানিকটা পশ্চিম দিকে নদীপাড়ে এগোতেই চোখ আটকে যায় এক প্রবীণের আহাজারিতে। নদীভাঙনে এ বছর নিজের কৃষি জমি, বসতবাড়ি সব হারিয়ে নিঃস্ব ষাটোর্ধ্ব রওশন আরা।

কান্নাজরিত কণ্ঠে পদ্মার পানির দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘ওইখানে আমার সব আছিল। জায়গাজমি সব গিল্লা খাইছে পদ্মায়। অহন আমার আর কিছুই নাই। কই যাইয়া থাকমু হেই জায়গাডাও কেউ দিতাছে না।‘

বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছিলেন ফাতেমা ও তার স্বজনরা। কাজের ফাঁকেই কথা তার সঙ্গে। তিনি অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়েই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনেগো কইয়া কী হইব। বছরের পর বছর আইতাছেন, আর ছবি উডাইয়া নিতাছেন। আমাগো তো কিছুই লাভ হইতাছে না। এই বছর কোরবানির লাইগ্যা একটা গরু বানাইছিলাম। হেইডাও খাওন না পাইয়া কয়দিন আগে মইরা গেছে।

‘নিজেরাই খাওন পাই না গরুরে খাওয়াইমু কেমনে? অহন বাড়িঘর লইয়া কই যাইমু পারলে হেই জায়গা দেহাই দেন। তাইলে আমাগো একটু অইলেও উপকার অইব।’

পাইনপাড়া গ্রামের ভাঙনের শিকার আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘গত সপ্তাহে গাঙ তিন নল দূরে আছিলো। তিন দিনে ভাঙতে ভাঙতে গাঙ আমার বাড়ির দুয়ারে আইয়া পড়ছে। আমাগো এই গ্রামের ২০-২৫ ডা পরিবার এইহান তোন সইরা গেছে। মনে করছিলাম এই বছর থাকতে পারুম। সময় কম ভাই, আমনের লগে কতা কইলে আমার কামের ক্ষতি অইব।’

থাকবেন কোথায়- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাশের গ্রামে ৪ শতাংশ জমিন ভাড়া নিছি। ওইহানে যাইয়া আপাতত উঠমু।’

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শরীয়তপুরের অধিকাংশ এলাকা তীড় রক্ষা বাঁধের আওতায় রয়েছে। তারপরও এ বছর কিছুটা আগাম পানি চলে আসায় কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

‘ভাঙনকবলিত এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে। জাজিরায় পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর