ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলা ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী।
ওসি আব্দুল ওহাবের বিরুদ্ধে বুধবার পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন পাইকারি ব্যবসায়ী মাসুদ আলম।
অভিযোগে বলা হয়, গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজের দোকানে ছিলেন মাসুদ। সে সময় বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন অর রশিদ তার দোকানে গিয়ে জানান, ওসি থানায় ডেকেছেন। এরপর তাকে পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যান।
থানায় গেলে ওসি ওহাব তার নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করেন। এরপর রুমের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা বন্ধ করে ও দরজা লাগিয়ে মাসুদকে মারধর করেন ওহাব।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মারধর শেষে ওহাব তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর ভয় দেখান। এরপর মাসুদ তার স্ত্রীকে খবর দিলে, তিনি ১ লাখ টাকা দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
বিষয়টি কাউকে জানালে ক্রসফায়ারের হুমকিও দেন ওসি ওহাব। থানা থেকে বেরিয়ে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন মাসুদ।
মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বাবার সঙ্গে আমার ঝামেলা রয়েছে। এ নিয়ে আদালতে দেওয়ানি মামলাও চলছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ওসি ওহাব আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে যান।
‘থানায় নিয়ে তার রুম আটকে আমাকে কোনো কিছু বলার সুযোগও দেননি। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো শুরু করেন। পিটিয়ে এক ঘণ্টা পর ১ লাখ টাকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেন। আমি থানা থেকে বের হয়ে স্ত্রীসহ হাসপাতালে যাই চিকিৎসা নিতে।’
বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফাতেমা নুসরাত বলেন, ‘মাসুদ নামের একজন চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তার হাতে-পায়ে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিই।’
পুরো অভিযোগ অস্বীকার করেন ওসি ওহাব। তিনি বলেন, ‘মাসুদের সঙ্গে তার বাবার পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে একটি ঝামেলা চলছে। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে থানায় ডাকা হয়। সে সময় থানায় বাবা-ছেলে দুজনই উপস্থিত ছিলেন।
‘বাবা-ছেলের মধ্যে মীমাংসার চেষ্টা করা হয় কিন্তু মাসুদ রাজি না হওয়ায় তাদের আদালতে যাওয়ার জন্য বলা হয়। পরে তারা বাবা-ছেলে দুজনই থানা থেকে চলে যান। এর বেশি কিছু নয়। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়।’
ওসির বিরুদ্ধে টাকা নেয়ার বিষয়টি মিথ্যা বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারী মাসুদের বাবা মো. হেমায়েত হোসেনও।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে পারিবারিক জমিজমা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আদালত ওই জমিতে ভোগদখলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সে বিষয়েই বোয়ালমারী থানার ওসি আমাকে ও আমার ছেলে মাসুদকে ডেকে নিয়ে যান।’
ওসি মাসুদকে কোনো প্রকার নির্যাতন করেননি দাবি করে হেমায়েত আরও বলেন, ‘ওসি তাকে ধমক ও বকাঝকা করে বলেছে, তোর বাবা তোকে জন্ম দিয়েছে। তার মৃত্যুর পর তো সব সম্পত্তি তোদেরই তাহলে মামলা করছিস কেন? মামলা তুলে নে। আমি তোর সম্পত্তি বুঝিয়ে দেব।’
ওসির বিরুদ্ধে ১ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওসি কোনো টাকা নেননি।’
এ বিষয়ে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর বলেন, ‘ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেনের দেয়া লিখিত অভিযোগ তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে নিয়ম অনুযায়ী ওসি ওহাবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’