রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের বসতভিটায় স্বেচ্ছায় ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহণ করা করেছে।
জাতিসংঘের জেনেভা কার্যালয়ের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে শুক্রবার পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং এ জনগোষ্ঠীর পক্ষে জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে চলমান রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করার ওপর জোর দিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
চলমান মানবাধিকার পরিষদের ৫০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুর মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি পেশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে শুরু থেকেই প্রস্তাবের বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসন সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রত্যাবাসন বিষয়টি এ প্রস্তাব থেকে বাদ দেয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
এতে বলা হয়, এ প্রেক্ষাপটে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়ে বাংলাদেশ তার শক্ত অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর এ প্রচেষ্টা মোকাবিলা করে। অবশেষে নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপস-আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলো।
প্রস্তাবে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এ ছাড়া তাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া পর্যন্ত এ গুরুভার বহনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়।
এ প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সব নির্যাতন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা ও তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকেও সমর্থন জানানো হয়। এ ছাড়া প্রস্তাবটিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সব প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
প্রস্তাবে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারকে মিয়ানমারবিষয়ক ‘নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশন’-এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপর মানবাধিকার পরিষদ এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রতিবেদন উপস্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়।
এ ছাড়া এ প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ‘রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বিষয়ে মানবাধিকার পরিষদে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়।