নড়াইলে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে দেয়ায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন আসামি শাওন খান ও রহমাতুল্লাহ রনি। এর মধ্যে শাওন জুতার মালাটি কলেজের মাঠ থেকে কুড়িয়ে এনেছিলেন, আর সেটি রনির নেতৃত্বে শিক্ষকের গলায় পরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ও আরেকজন।
তিন দিনের রিমান্ডে আসামিদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন নড়াইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহামুদুর রহমান।
তিনি বৃহস্পতিবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোয় সরাসরি জড়িত ছিলেন তিন জন। তাদের মধ্যে রনি ও শাওন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মালা পরানোর সত্যতা স্বীকার করেছেন। রিমান্ড শেষে ৪ জনকে দুপুরে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের বরাতে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, জুতার মালাটি তৈরি করেছিল বিক্ষুব্ধ কয়েকজন ছাত্র। তারা সেই মালা অধ্যক্ষের গলায় পরিয়ে না দিতে পেরে কলেজের মাঠে ফেলে দেয়। সেখান থেকে জুতার মালা কুড়িয়ে নিয়ে আসেন শাওন খান। পুলিশ যখন স্বপন কুমারকে কলেজের ভবন থেকে বের করে আনেন, তখন ওই মালা রহমত উল্লাহ রনির হাতে তুলে দেন শাওন। পরে রনির নেতৃত্বে শাওন ও সোয়েব নামের আরেক ব্যক্তিকে নিয়ে স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় পরিয়ে দেন।
প্রেক্ষাপট
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ।
আরও পড়ুন: শিক্ষককে জুতার মালা: ঘুম ভাঙল প্রশাসনের, হারাচ্ছেন না পদ
কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনার ৯ দিন পর গত ২৭ জুন দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন।
দণ্ডবিধির ৩৪, ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৪১, ৩৩২, ৩৫৩, ৩৫৫, ৪৩৬, ৪২৭, ৫০০ ধারায় করা এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তারা হলেন, ওই কলেজের শিক্ষার্থী রহমাতুল্লাহর রনি, মোবাইল ফোনের মেকানিক শাওন খান, অটোরিকশার চালক রিমন আলী, মাদ্রাসা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ও শ্রমিক মো. নুরুন্নবী। তাদের বাড়ি নড়াইল সদরের মির্জাপুর কলেজের আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে।
এদের মধ্যে রনি, শাওন, রিমন ও মনিরুল গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে রিমান্ডে ছিলেন। তাদের বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠানো হয়। নুরুন্নবীর ৩ দিনের রিমান্ড শুরু হয় বৃহস্পতিবার থেকে।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহামুদুর বলেন, ‘ঘটনার দিন মনিরুল হ্যান্ড মাইকে উসকানিমূলক ঘোষণা দিয়েছিলেন। রিমন আলী স্থানীয়দের মধ্যে জনরোষ সৃষ্টি করেছিলেন এবং নুরুন্নবী কলেজ মাঠে গিয়ে নিজের গায়ের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে সেখানে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। এসব অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।’
আরও পড়ুন: শিক্ষক লাঞ্ছনা: ওসির পর প্রত্যাহার ফাঁড়ির ইনচার্জও
তিনি আরও জানান, জুতার মালা পরিয়ে দেয়া মূল অভিযুক্তদের মধ্যে সোয়েবকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তিনি যশোরের অভয়নগর উপজেলার সিঙ্গাড়ি আবদুল হক ডিগ্রি কলেজের ছাত্র।