দক্ষিণের ২১ জেলার যাত্রীদের ঈদযাত্রায় এবার বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে পদ্মা সেতু। যাদের সেতু দেখতে যাওয়ার মতো সময় হয়ে ওঠে না, তারা বাড়ির পথ ধরলেই দেশের তুমুল আলোচিত স্থাপনাটি দেখতে দেখতে যাবেন। তাই এবার এই পথে যাত্রীর চাপ বেশি।
সেতু ঘিরে আগ্রহ এতটাই বেশি যে, যারা মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট ব্যবহার করে বাড়ি যেতেন, তারাও বাড়তি পথ ঘুরে যাচ্ছেন মাওয়া হয়ে।
আগামী রোববার সারা দেশে একসঙ্গে উদযাপিত হবে ঈদ। তিন দিনের ছুটি শুরু শনিবার থেকে। সঙ্গে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির এক দিন যোগ হওয়ায় মোট ছুটি চার দিনের। কেউ কেউ ঈদ শেষে সপ্তাহের বাকি কর্মদিবস ছুটি জোগাড় করেছেন। এর সঙ্গে আবার পরের সপ্তাহের দুই দিন ছুটি যোগ করে সেটিকে নিয়ে গেছেন টানা ৯ দিনে।
এর ফলে বৃহস্পতিবার বিকেলে অফিস শেষেই বাড়ির পথে ভিড় বেড়েছে।
গুলিস্তান বিআরটিসি বাস টার্মিনালে গিয়ে সে সময় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেল। এই পথে এর আগে এত যাত্রী দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা।
এত ভিড় কেন? এই প্রশ্নের জবাবটা মোটেও কঠিন নয় মো. রুবেলের কাছে। তিনি রাজধানীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আগে বাড়ি ফিরতেন লঞ্চে। এবার আর সদরঘাটের পথ ধরেননি।
জানালেন পদ্মা সেতু হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে বলে আনন্দে ভাসছেন। তাই লঞ্চ বাদ দিয়ে বেছে নিয়েছেন মাওয়ার রাস্তা।
রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে লঞ্চে বাড়ি যেতাম। পদ্মা সেতু এখনও দেখা হয় নাই। বাড়িও যাব পদ্মা সেতুও দেখব, আহা ঈদ।
‘তাছাড়া রাত ৯টায় লঞ্চে উঠলে ভোরে বরিশাল পৌঁছাই। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে বরিশাল যেতে চার ঘণ্টার মতো লাগে। সময়ও বাঁচল, পদ্মা সেতুও দেখলাম।’
রুবেলের মতো অনেকেই লঞ্চ কিংবা আরিচা ঘাট ব্যবহার না করে বেছে নিয়েছেন মাওয়া ঘাটের রাস্তা।
মেহেদী হাসানের বাড়ি ফরিদপুর ভাঙ্গা। তুলনামূলক কম সময়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করতেন মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট। ফেরি পার হয়ে যেতেন বাড়িতে।
এবার কেন সে পথে যাচ্ছেন না?
মেহেদী বলেন, ‘এখন পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে মাওয়া হয়ে বাড়ি যাচ্ছি। সময় অনেক কম লাগে। তাছাড়া প্রথম পদ্মা সেতু দেখব বাড়ি যাওয়ার সময়।
তবে যাত্রীদের যত আগ্রহ, তা মেটানোর মতো পর্যাপ্ত বাহন নেই বাসস্ট্যান্ডে। আবার মাওয়ার পথে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারলে একেবারে না থেমেও পদ্মা সেতুতে উঠে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে তো হবে। এর আগের সংক্ষিপ্ত পথটুকু পাড়ি দিতেই লাগছে দীর্ঘ সময়।
ইমাদ পরিবহনের সুপারভাইজার শাহীন বলেন, ‘ধোলাইপাড়ে, হানিফ ফ্লাইওভার ও গুলিস্তানে প্রচণ্ড জ্যাম। আগে এই মাওয়া হয়ে যারা বাড়ি যেত না, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে তারাও এখন এই রাস্তা বেছে নিয়েছে। জ্যামের কারণে বাস আসতে কিছুটা দেরি করছে। তাই বাস ছাড়তেও কিছুটা দেরি হচ্ছে ‘
বিআরটিসি কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. মেহেদী বলেন, ‘একটা করে বাস আসছে আর টিকিট বিক্রি করছি। বাস না আসলে টিকিট বিক্রি করছি না। জ্যামের কারণে বাস আসতে দেরি করছে। যাত্রীদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’