ঈদুল আজহা সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটের বুড়িগঙ্গা পাড়ের নৌকার মাঝিরা। যাত্রী আনা-নেয়া থেকে শুরু করে নদীর ওপার থেকে আসা মালামাল এপারে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।
সদরঘাটের ওয়াইজঘাট, তেলঘাট, লালকুঠিঘাট ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বুড়িগঙ্গাপাড়ের নৌকায় মাঝিদের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। নদীর দুই পাড়ের মানুষের চলাচলের জন্য তারা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নৌকা চালান। কোনো মাঝি সকালে আসেন, আবার কোনো মাঝি দুপুরে বিশ্রাম নেন। কেউবা রাতের শেষভাগ পর্যন্ত নৌকা চালান।
রাজধানীর সদরঘাটের নৌকা চলাচল করে এমন তিনটি ঘাট হলো— ওয়াইজঘাট, তেলঘাট ও লালকুঠিঘাট। তিন ঘাটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং যাতায়াতে বেশি লোক হয় ওয়াইজঘাট এলাকায়।
এই ঘাট থেকে প্রতিদিন বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে নাগর মহল, খাজা মার্কেট, আলম মার্কেট, ব্রিজ মার্কেটসহ আশপাশের ছোট-বড় বিভিন্ন অংশে চলাচল করে ১৫০টির বেশি নৌকা। প্রতিটি নৌকায় মাঝিরা ছয় থেকে আটজন লোক নিয়ে নদী পারাপার হতে দেখা যায়। জনপ্রতি নদী পারাপারে ৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণে এক নৌকায় ৪০ টাকা ভাড়া আসে।
বুড়িগঙ্গা পাড়ের মাঝিরা জানান, কিছু নৌকা আছে যারা শুধু রিজার্ভে নিয়ে যাত্রী পারাপার করেন। আবার কিছু নৌকার মাঝি রয়েছেন, যারা শুধু মালামাল পরিবহন করেন নদী পারাপারে। আর বেশির ভাগ মাঝি ৫ টাকা করে ছয়জন হোক কিংবা আটজন হোক তাদের নিয়ে নদী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩০০ ছোট-বড় নৌকা চলাচল করে। লোক আনা-নেয়ার পরিধি ভেদে একেকজন মাঝি দৈনিক ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করেন। ঈদ উপলক্ষে নিয়মিত যাত্রীদের সঙ্গে অতিরিক্ত মানুষের চলাচল করায় সামনের দিনগুলোতে আয়ের পরিধি আরও বাড়বে বলে তারা আশা করছেন।
বুড়িগঙ্গাপাড়ের মাঝিদের এখন কোনো ঘাটের মহাজন কিংবা কোনো ব্যক্তিকে দিতে হচ্ছে না খাজনা থেকে শুরু করে অন্যান্য চাঁদা। তবে এ ক্ষেত্রে নদী পারাপারে প্রতিবার জনসাধারণকে দিতে হচ্ছে ঘাটের ইজারাদার আসা-যাওয়ার পথে ২, ৪, ৫ টাকা থেকে শুরু করে মালামাল পরিবহনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা।
নিয়মিত নৌকায় চলাচল করে কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এখনকার দিনে ৫ টাকায় নদী পারাপার হওয়াটা হয়তো কল্পনার বিষয়। মাঝেমধ্যে মনে হয় এইটুকু পথ পাড়ি দিতে আমরা ৫ টাকা দিচ্ছি মাঝিদের। আমাদের মধ্যে এটা সত্যি অন্য রকমের অনুভূতি কাজ করে।
‘এখানকার মাঝিদের জীবন-জীবিকা সম্পূর্ণটাই নির্ভর করছে বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ের মানুষের ওপর। তবে মাঝেমধ্যে মাঝিদের তাড়াহুড়ো, অসচেতনতা কিংবা মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী পারাপারে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে সব সময়। এগুলো দেখার জন্য নেই কোনো কর্তাব্যক্তি কিংবা সংশ্লিষ্ট কেউ।’
এসব বিষয়ে ঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা কথা বলতে রাজি নন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইজারাসংশ্লিষ্টদের একজন বলেন, ‘নৌকার মাঝিরা এখন নিজেদের মতো করে চলতে পারেন। তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব আমাদের নেই। তারা নিজেরা নৌকা চালান এবং নিজেদের আয়ের টাকা নিয়ে বাড়িতে ফেরেন।’