ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে বাইক নিষিদ্ধ করার পর বাসের টিকিট পেতে যে দুর্ভোগের শঙ্কা ভাবা হচ্ছিল, হয়েছেও তা।
ঈদুল ফিতরে টার্মিনালে গিয়েই টিকিট কেটে বাড়ির পথ ধরা গেলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে টিকিটের জন্য।
সব রুটে বাসে আগাম টিকিট কাটা হয় না। যেমন গুলিস্তান থেকে দক্ষিণের পথে বিআরটিসি কাউন্টারে গিয়েই কাটা হয় টিকিট। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এই টিকিটের চাহিদা বেড়েছে, তবে ঈদ যাত্রা শুরুর পর যে চাপ দেখা গেছে, সেটি এতদিন দেখা যায়নি।
মো. ইমরান। বাড়ি বরিশাল। পরিকল্পনা করেছিলেন মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটা হয়ে উঠেনি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় লঞ্চের বদলে সড়ক পথে যাচ্ছেন তিনি।
তার সঙ্গে দেখা গুলিস্তানে বিআরটিসির বাসের কাউন্টারে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও টিকিট না পেয়ে ভীষণ বিরক্ত। রাগটা গিয়ে পড়েছে সড়ক বিভাগের ওপর, যারা মহাসড়কে বাইক নিষিদ্ধ করেছে।
নিউজবাংলাকে ইমরান বলেন, ‘আজকেও নিউজ দেখলাম বাস দুর্ঘটনার। বাস-ট্রাক প্রতিদিন দুর্ঘটনা কবলিত হচ্ছে। তাহলে তাদেরকেও বন্ধ করে দিক। সব দোষ হয়েছে বাইকারদের। কে, কবে, কী করছে- তার দায়ভার আমাদের নিতে হচ্ছে। ইচ্ছা ছিল এবারের ঈদে পদ্মা সেতু হয়ে বাইকে বাড়ি যাব। সেটা আর হলো না। এখন কাউন্টারে এসেও টিকিট পাচ্ছি না।’
ইচ্ছার বাইরে ফরিদপুরে বাসে করে যেতে হচ্ছে লিমন মোল্লাকে। তারও পরিকল্পনা ছিল বাইকে যাবেন।
তিনি বলেন, ‘বাস মালিক সমিতির ইচ্ছায় বাইক বন্ধ হয়েছে। সরকার তাদের খেদমত করতেছে আমাদের বাঁশ দিয়ে। এত মানুষের ভিড় হতো না যদি বাইক চলত।’
দীর্ঘ অপেক্ষায় ভোগান্তি
দূরপাল্লার বিরতিহীন বাসের টিকিট না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে বেছে নিচ্ছেন লোকাল বাস।
ফরিদপুর ভাঙার যাত্রী ইয়াসিন মোল্লা বলেন, ‘অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট পাই নাই। এখন লোকাল বাসে করে বাড়ি যাব। অবশ্য আমাদের রুটের লোকাল বাসেও সমস্যা নাই। রাস্তা ভালো তাই।’
অনেকে বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। বাস আসলেই তাদের টিকিট দেয়া হচ্ছে। যানজটের কারণে বাস আসতে দেরি হচ্ছে এবং বাসের স্বল্পতা ও রয়েছে।
বরিশালের যাত্রী মো. সোহান বলেন, ‘বিআরটিসি বাসের আসায় বসে আছি। সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। বাস আসলে টিকিট দিচ্ছে। তবে বাস পর্যাপ্ত না হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে।’
বিআরটিসি কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. মেহেদী বলেন, একটা করে বাস আসতে আর টিকিট বিক্রি করছি। বাস না আসলে টিকিট বিক্রি করছি না। জ্যামের কারনে বাস আসতে দেরি করছে। যাত্রীদের সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
যেসব বাসে আগাম টিকিট দেয়া হচ্ছে, সেখানেও কোনো টিকিট নেই। শনিবার পর্যন্ত বাসের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে কাউন্টার থেকে।
দোলা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো. রাব্বি বলেন, ‘আগামীকাল পর্যন্ত সিট ফাকা নাই। শনিবার বিকেলে ফাঁকা আছে। আমরা অগ্রিম টিকিট দিচ্ছি। সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় লেগে আছে। গতকাল এত চাপ ছিল না। আজকে হুট করে চাপ বাড়ছে। আগামীকালও এমন চাপ থাকবে।’
টুংগীপাড়া এক্সপ্রেসও সিট ফাকা নেই। পরিবহনটির টিকিট বিক্রেতা মো. রয়েল বলেন, ‘সব সিট বিক্রি হয়ে গেছে। যদি গাড়ি ভাড়ায় তাহলে সিট পাওয়া যাবে। না হলে সিট পেতে শানিবার বিকেল।’