ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আগের দিনের চেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেলেও অনেক যাত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
যাত্রীদের একাংশ বলেছে, ট্রেন ছাড়তে কিছুটা দেরি করলেও তা মানা যায়। তাদের ভাষ্য, এই ঈদে গতবারের তুলনায় ট্রেনের ভেতরে ভিড় কম।
বৃহস্পতিবার সকালে স্টেশন থেকে বেশির ভাগ ট্রেনই ছেড়ে যায় নির্ধারিত সময়ে, তবে কয়েকটি ট্রেন কিছুটা দেরিতে ছেড়েছে। সেটাও ১৫ বা ২০ মিনিটের বেশি নয়।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এটা তেমন কোনো দেরি নয়। স্বাভাবিক সময়েও যাত্রী ওঠানামা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না, তা পরীক্ষা করতে এতটুকু সময় লেগেই যায়।
আর রেলপথে ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তি নেই বলে স্বস্তি প্রকাশ করেন যাত্রীরা। পাশাপাশি গত ঈদের তুলনায় ট্রেনের ভেতর ভিড় কম বলে জানিয়েছেন তারা, তবে টিকিট নেই এমন অনেক যাত্রীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠতে দেখা গেছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলোতে যাত্রীর চাপ একটু বেশি। যেসব টিকিটপ্রত্যাশী ৩ জুলাইয়ে অগ্রিম ঈদযাত্রার টিকিট কেটেছেন, আজ তারা যাত্রা করছেন। অনেকেই ট্রেন ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে এসেছেন স্টেশনে।
৮টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত সময়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে নীলসাগর এক্সপ্রেস। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৮টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তখন পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মে ছিল।
এ ছাড়া সাড়ে ৮টায় মহুয়া কমিউটার, ৮টা ৪৫ মিনিটে কর্ণফুলী কমিউটার, ৯টা ১০ মিনিটে রংপুর এক্সপ্রেস এবং ৯টা ৪৫ মিনিটে তিতাস কমিউটার ছাড়ার অপেক্ষায় ছিল।
স্টেশন ছাড়তে কিছুটা দেরি হলেও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী শহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘ট্রেনের টিকিট কাটতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। দুই দিন অপেক্ষার পর কাউন্টার থেকে টিকিট পেয়েছি। আজ বাড়ি যাচ্ছি।
‘১৫ মিনিটের মতো দেরি হয়ে গেছে। ১ ঘণ্টা দেরি মানা যায়। এর বেশি হলে বিরক্তি লাগে। বড়সড় কোনো শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। এটাই ভালো কথা।’
সুন্দরবন এক্সপ্রেসের যাত্রী স্কুলশিক্ষক দম্পতি জাহিদুজ্জামান ইবনে জামান ও জান্নাতুল ফেরদৌস। ৫ বছর বয়সী মেয়ে আয়েশাকে নিয়ে রওনা হয়েছেন দর্শনার উদ্দেশে।
জাহিদুজ্জামান বলেন, ‘শুনলাম কয়েক মিনিট করে দেরি হচ্ছে ট্রেন, তবে সেটা বড় কথা নয়, আধা ঘণ্টা, ৪৫ মিনিট দেরি হতেই পারে।’
তিনি বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার ট্রেনের ভেতরে ভিড় কম। কিছুটা ফাঁকাতেই যাওয়া যাচ্ছে। অনেক কষ্টে টিকিট পেয়েছিলাম। এখন যাত্রাটা নিরাপদ হলে আরামে যেতে পারব বলে মনে করছি।’
চুয়াডাঙ্গার রাসেল বেসরকারি ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি বলেন, ‘দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক কষ্টে টিকিট পেয়েছিলাম। ট্রেনে বাড়তি চাপ নেই। আরামে যেতে পারব মনে হচ্ছে।’
সকাল ৯টা ১০ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল রংপুর এক্সপ্রেসের। এই ট্রেনে বাড়ি যাচ্ছেন রংপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী লিটন।
তিনি বলেন, ‘যাতে করে জ্যামে না পড়ি এবং ট্রেন মিস না হয়, তার জন্য অনেক আগেই চলে এসেছি স্টেশনে।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বুধবার জানিয়েছিলেন, ট্রেনে অন্তত ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মানুষ রাজধানী ছাড়তে পারবে। দিনে ও রাতে ৩৭ জোড়া ট্রেন কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
টিকিট বিক্রি শুরুর দিন ১ জুলাই দেয়া হয় ৫ জুলাইয়ের টিকিট। ২ জুলাই ৬ জুলাইয়ের, ৩ জুলাই ৭ জুলাইয়ের, ৪ জুলাই ৮ জুলাইয়ের এবং ৫ জুলাই ৯ জুলাইয়ের টিকিট দেয়া হয়।
ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয় ৭ জুলাই থেকে। আজ ১১ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
এর বাইরে ৮ জুলাই ১২ জুলাইয়ের টিকিট, ৯ জুলাই ১৩ জুলাইয়ের, ১১ জুলাই ১৪ এবং ১৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে।
১১ জুলাই সীমিত পরিসরে কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে। ১২ জুলাই থেকে সব ট্রেন চলাচল করবে।