১৭ বছর আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে নিবন্ধনধারী হয়ে এখনো নিয়োগ না পাওয়ায় প্যানেল ভিত্তিত নিয়োগসহ তিন দাবিতে গণঅবস্থান করছেন নিয়োগ বঞ্চিত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা।
মঙ্গলবার থেকে তারা শাহবাগের জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এসব নিবন্ধনধারী শিক্ষককরা মূলত সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।
প্রশাসন তাদের রাতে থাকার অনুমতি না দেয়ায় থাকতে পারেন না না বলে জানিয়েছেন।
গ্রন্থাগারের সামনে ৩২তম দিন অতিবাহিত করলেও এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন আশ্বাস তারা পায়নি বলে জানান। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তারা।
নিয়োগ বঞ্চিত এসব বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিবন্ধনের জন্য ২০০৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৬ বার পরীক্ষা নিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ বা এনটিআরসিএ।
কিন্তু এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিবন্ধনের জন্য সনদপ্রাপ্ত সকল প্রার্থীদের নিয়োগ হয়নি। বরং প্রতিবছর নতুন করে নিবন্ধন পরীক্ষা নেয়ায় নিবন্ধনধারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেই যাচ্ছে এনটিআরসিএ।
তাই নতুন কোন নিবন্ধন পরীক্ষা না নিয়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্যানেলভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে তাদের গণ অবস্থান।
নিয়োগবঞ্চিত নিবন্ধনধারী এসব শিক্ষকের তিন দাবিগুলো হলো- এক আবেদনেই নিবন্ধনধারী চাকরি প্রত্যাশীদের কোটাবিহীন প্যানেলে নিয়োগ দেয়া।
চাকরি প্রত্যাশীদের স্ব স্ব নীতিমালায় নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন পরীক্ষা বন্ধ রাখা।
ইনডেক্সধারী অর্থাৎ নিবন্ধনের সনদ পেয়ে চাকরিতে যোগদানকারীদের প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত না করে আলাদা বদলির ব্যবস্থা করা।
গণ অবস্থানে অংশ নেয়া প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জিএম ইয়াসিন বলেন, ‘১ হাজার ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ খালি থাকলে আমাদের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা আবেদন করতে হয়। এক চাকরির জন্য একই কর্তৃপক্ষের অধীনে হাজার হাজার আবেদন করার এমন নজির পৃথিবীর কোথাও নেই।’
তিনি বলেন, ‘এনটিআরসিএ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের জন্য অনির্দিষ্ট আবেদনের ব্যবস্থা চালু করে বেকার নিবন্ধনধারীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বশান্ত করছে। তাই আমাদের দাবি এক আবেদনেই নিবন্ধনধারী চাকরি প্রত্যাশীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।’
জিএম ইয়াসিন বলেন, ‘২০০৫ থেকে এখন পর্যন্ত যে ১৬টি নিবন্ধন পরীক্ষা হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষায় পূর্বের পরীক্ষার মাধ্যমে নিবন্ধনধারীরাও অংশ নিচ্ছে। অনেকই ১২/১৩টি নিবন্ধন পরীক্ষায়ও অংশ নিয়ে ১২ বার একই সনদ নিতে হয়েছে। কিন্তু তাদেরও নিয়োগ হয়নি।’
এই নেতা প্রশ্ন তুলেন, ‘এনটিআরসিএ কার স্বার্থে প্রতি বছর বা একাধিক নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে নিবন্ধনধারীর সংখ্যা শুধু বৃদ্ধি করেই যাচ্ছে? কী কারণে একজন ব্যক্তিকে বার বার যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে একাধিক সনদ নিতে হচ্ছে?’
যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রথম থেকে পঞ্চম, ষষ্ঠ থেকে ১২তম এবং ১৩ থেকে ১৬তম নিবন্ধন পরীক্ষার প্যানেল ভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা করলে এসব জটিলতা সহজেই কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
সংগঠনটির সভাপতি আমির হোসেন বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বদলি ব্যবস্থা চালু না থাকায় এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে। ইনডেক্সধারীদের (সনদ পেয়ে চাকরিরত) সঙ্গে বেকার নিবন্ধনধারীদের একই সাথে আবেদনের ব্যবস্থা চালু থাকায় ঘুরে ফিরে ইনডেক্সধারীদেরই নিয়োগ হচ্ছে। ফলে সারা দেশে কৃত্রিম শিক্ষক সংকট তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বেকার নিবন্ধনধারীরা নিয়োগ বঞ্চিত থেকেই যাচ্ছে।’
এই নেতা বলেন, ‘সম্প্রতি এনটিআরসিএ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সেখানে ৫৪ হাজার ৩০৭টি পদের বিপরীতে ১-১৫তমদের মধ্য হতে কেন ১৪ হাজার ৪৬৬ জনকে নিয়োগ সুপারিশ দিয়েছে। বাকি সব পদেই পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্তরাই (ইনডেক্সধারীরা) নিয়োগ পেয়েছে। অথচ ১-১৫তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এখনো ৪০ হাজার নিবন্ধনধারী শিক্ষক নিয়োগই পায়নি।’
নিয়োগবঞ্চিত নিবন্ধনধারী শিক্ষককদের এই নেতা আরও বলেন, ‘বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্তমানে শিক্ষক শূন্যতায় ভুগছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, ৮৫ হাজার পদ এখনও খালি। তাই এক আবেদনে ইনডেক্সধারীদের অন্তর্ভুক্ত না রেখে প্যানেলভিত্তিক নিয়োগ হলে বেকার নিবন্ধনধারীরা বার বার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। কৃত্রিম শিক্ষক সংকট দূর হবে এবং শিক্ষার্থীরা লাভবান হবে।’