পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যাত্রী সংকটের শঙ্কায় থাকা রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলোতে যাত্রী থাকলেও নেই ঈদযাত্রার সেই পুরোনো আমেজ।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ছুটি শুরুর আগের দিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বরিশালের ঘাটে রাত ৮টা পর্যন্ত যাত্রীর তেমন চাপ ছিল না। অন্যান্য সময় ডেকে যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকলেও এবার তা দেখা যায়নি।
অন্যান্যবারের মতো এবারের দৃশ্যপট আলাদা। হাঁকডাক করে লঞ্চে যাত্রী ওঠানোর প্রতিযোগিতা করছেন কর্মচারীরা। এ সময় ডেকে কিছু যাত্রী থাকলেও কেবিন একেবারেই ফাঁকা।
বরিশালগামী লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা অন্যান্য রুটের চেয়ে বেশি দেখা গেছে। পটুয়াখালী রুটের ৮ তারিখের কেবিনের টিকিট এখনও অনেক লঞ্চেই ফাঁকা রয়েছে। তাই অন্যান্য রুটে ঈদ-পূর্ববর্তী স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চালুর ব্যাপারেও দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
ঈদযাত্রায় ভাড়া বেশি নেয়ার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি এবার। ডেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেয়া হচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা। এমনকি গত রমজানের ঈদের থেকেও কম ভাড়া নেয়া হচ্ছে এবার। যেখানে গত ঈদে সিঙ্গেল কেবিন ১৫০০ টাকা নেয়া হয়েছিল, সেখানে এবার নেয়া হচ্ছে ১২০০ টাকা। আর ডাবল কেবিন নেয়া হয়েছে ২৫০০ টাকা। আর এবার নেয়া হয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকা।
পদ্মা সেতুর প্রভাবে যাত্রী কমেছে বলে জানালেন লঞ্চের স্টাফ ও কর্মচারীরা। সুরভী-৭ লঞ্চের কেরানি মারুফ জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরদিন থেকে যাত্রীসংখ্যা কিছুটা কমেছে। ডেকে স্বাভাবিক থাকলেও কেবিনের যাত্রী খুবই কম।
তবে ঈদের দু-এক দিন আগে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি। বলেন, ‘নতুন সেতু হওয়ায় এখন মানুষ শখ করে বাসে করে বাড়ি যাচ্ছে। ঈদের পরই ঘরমুখো মানুষের প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে।’
পারাবত-১২ লঞ্চের সুপারভাইজার বাবুল বলেন, ‘যারা লঞ্চের যাত্রী, তারা লঞ্চেই যান। তবে যারা আগে বিলাসবহুল কেবিনে যেতেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় তারা এখন ব্যক্তিগত গাড়িতে যাচ্ছেন। এতে করে কেবিনের যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। যারা পরিবারসহ যাচ্ছেন, তারা লঞ্চেই আসছেন।’
সদরঘাটের বরিশালগামী এক যাত্রী সবুজ মিয়া বলেন, ‘অন্যান্যবার এ সময় থেকেই ঈদযাত্রীর ভিড় থাকে। এবার তা কম। আমাদের লঞ্চেই ভালো লাগে, তাই লঞ্চেই যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘লঞ্চে বেশি আসা-যাওয়া করি। এতে একটু সময় বেশি লাগলেও স্বস্তি আছে। বাসে কিন্তু সেটা নেই। এখন আবার শুনছি, লঞ্চে ডেকের ভাড়া আগের দামেই নিচ্ছে।’
ডলার কোম্পানির ২৪টি লঞ্চের মালিক ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ জাহাজ রয়েছে। যাত্রীর চাপ হলেই আমরা স্পেশাল লঞ্চ চালু করব৷ আর নিয়মিত লঞ্চ যাওয়ার পর এসব লঞ্চ ঘাট থেকে ছাড়া হবে। টিকিট ফোনে যোগাযোগ করে কাটতে পারবে কিংবা সরাসরিও কাটা যাবে। যাত্রীরা যাতে দুর্ভোগে না পড়ে সে জন্য আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে লঞ্চের ব্যবস্থা রেখেছি।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সদরঘাটের নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. শহীদ উল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রায় এখনও স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়নি। লঞ্চ মালিকরা সিভি দিয়ে রেখেছে। যাত্রীর চাপের ওপর নির্ভর করে লঞ্চ চলবে। আজও নিয়মিত লঞ্চগুলোই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। আর যাত্রীর চাপ এখনও কম। বৃহস্পতিবার থেকে ছুটি হলে যাত্রীর চাপ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, স্পেশাল লঞ্চও চালু হতে পারে।’
বাংলাদেশ নৌপুলিশের সদরঘাট নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কাইয়ুম আলী সরদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। ঈদ উপলক্ষে আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ সুপার নৌপুলিশ, ঢাকা অঞ্চল কর্তৃক নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে, কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক চালু রয়েছে। কয়েকটি ধাপে নৌ পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।
‘নিরাপত্তা জোরদার করতে পল্টনে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে তিন ভাগে ভাগ হয়ে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে৷ নদীপথে দুইটি দল থাকবে। চুরি-ছিনতাই রোধে প্রতিটি লঞ্চে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ থাকবে।’